রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সব পরীক্ষা অনলাইনে নিতে চায় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে অফিস আদেশও পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ১১ মে অনুষ্ঠিত ৩০তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। ৭৮তম সিন্ডিকেট সভায় এর অনুমোদন দেয়া হয়।
বুধবার এই আদেশ ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতেই আগ্রহ তাদের। শিক্ষার্থীদের এই দাবির সঙ্গে অনেক শিক্ষকও সংহতি জানিয়েছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ইসমাইল রিফাত বলেন, ‘যদি অনলাইনে পরীক্ষা নিতে হয়, তাহলে দেড় বছর আমাদের সময় নষ্ট করা হলো কেন? আমাদের অনেক বন্ধু আছে, যারা অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার সক্ষমতা রাখে না। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দিতে চাই।’
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা মুরাদ বলেন, ‘অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অফলাইনে পরীক্ষা নিতে পারলে বেরোবি প্রশাসন কেন পারবে না, সেটা কিন্তু তারা স্পষ্ট করেনি। নতুন একটা সিস্টেমের সঙ্গে আমরা কতটুকু খাপ খাওয়াতে পারব, সেই প্রশ্ন এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস তমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসে আছে প্রায় দেড় বছর ধরে। এ রকম অবস্থায় প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী চায় অতি দ্রুত পরীক্ষা। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষার জন্য যে রূপরেখা প্রয়োজন, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এখনও দেয়া হয়নি।
‘এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও অনেক দিন লাগবে। কারণ অনেক শিক্ষক এখনও প্রস্তুত নন, এভাবে পরীক্ষা নিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই সক্ষমতা আছে কি না, এটাও ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়াও কঠিন।’
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেলা মোস্তারি তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি একজন নন-টেকনিক্যাল মানুষ। সমাজের মতো সহজ সাবজেক্ট ছাত্রদের পড়াই। স্বাভাবিকভাবেই কম্পিউটার/আইসিটি নিয়ে যারা পড়াশুনা করেন, তাদের মতো টেকনিক্যাল নলেজ আমার নেই। আমার ছাত্রদেরও নেই। কিন্তু আমাদের যে বিদ্যা আছে, তাতে একটু ট্রেনিং পেলেই আমরা সঠিক ও সুন্দরভাবে প্রয়োজনীয় কাজটুকু করতে ফেলতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। উপউপাচার্য মহোদয়ের নেতৃত্বে কমিটি করার মাধ্যমে গত ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছিল।
‘করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সেটি বন্ধ করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পূর্বের ন্যায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফলাইনে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শরিফা ডিনা নিউজবাংলাকে জানান, যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নতুন করে দাবি ওঠে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার, সেটা কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।