সরকারঘোষিত সময়ের মধ্যে ১৩ জুন স্কুল খুলবে কি না, এ নিয়ে সংশয়ে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদিকে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সরকারঘোষিত নির্ধারিত দিনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া না হলে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবে। এ বিষয়ে আগামী ১ জুন তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করবে।
নিউজবাংলাকে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সেকান্দার আলী বলেন, ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা টিকে আছে তাদের অবস্থাও খুবই নাজুক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক সমাজের অধিকাংশই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। সবকিছু মিলিয়ে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’
সেকান্দার আলী বলেন, সরকার তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছুই খুলে দিয়েছে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ থাকবে কেন?
এ ছাড়া তিনি আসন্ন বাজেটে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এম এইচ বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না ঘোষিত সময়ের মধ্যে স্কুল খুলে দেবে সরকার। এ জন্য আমরা শিগগিরই আন্দোলনে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে স্কুলগুলো চালু করার। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেঁচে থাকা কঠিন।’
কিন্ডারগার্টেনগুলো খুলতে প্রস্তুতি কেমন?
রাজধানীর সাতটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে তিনটি স্কুলের অফিস খোলা। আর বাকি চারটি স্কুলে তালা ঝুলছে।
খোলা থাকা স্কুলগুলো হলো শহীদ লে. সেলিম শিক্ষালয়, জিনিয়াস ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লুমিনাস আইডিয়াল স্কুল। এই স্কুলগুলোতে অনলাইন শিক্ষা কাযর্ক্রম চলছে।
বন্ধ থাকা স্কুলগুলো হলো কিডস হাইভ প্রিপারেটরি স্কুল, কবির শিশু শিক্ষালয়, আদর্শলিপি কিন্ডারগার্টেন, ডিয়ার পার্ক টিউটোরিয়াল।
অফিস খোলা রাখা তিনটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারঘোষিত নির্ধারিত সময়ে স্কুল খুলে দেয়া হলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ জন্য তাদের পুরো প্রস্তুতি আছে।
স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে শহীদ লে. সেলিম শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া হোসেন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা আগেও স্কুল প্রস্তুত করেছিলাম। এখন যেহেতু নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, সে জন্য আমরা আবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আমি সংশয়ে আছি ঘোষিত সময়ে খুলবে কি না।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকা কঠিন।
জিনিয়াস ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে। কেউ কেউ সবজি ও আমের ব্যবসা করেও জীবিকা নির্বাহ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের স্কুল খোলার ঘোষণা আমরা একাধিকবার শুনেছি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছি ‘
সীমিত পরিসরে স্কুল খুলে দিলেও দেশ ও জাতির জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। এতে জাতি মেধা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এভাবে চলতে থাকলে শিশুরা ঘরে আবদ্ধ থেকে মানসিক রোগী হয়ে যাবে।
লুমিনাস আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালীন আমরা অনলাইনে শিক্ষা কাযর্ক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার যদি ঘোষিত সময়ে স্কুল খুলে দেয়, তাহলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কাযর্ক্রম পরিচালনা করব।’
পরিস্থিতি অনুকূলে এলে ১৩ জুন থেকেই স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এর আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ মে থেকে স্কুল-কলেজ খোলার কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল ২৪ মে। কিন্তু দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। বন্ধ দফায় দফায় বাড়িয়ে আগামী ১২ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।