অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর তদন্ত স্থগিত চেয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন।
একই সঙ্গে হাজিরা হতে সময় চেয়ে ভিসি কলিমউল্লাহর আবেদন নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
তার পক্ষে আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, `হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আমরা রিটটি ফাইল করেছি।
`তদন্ত প্রসেডিং চ্যালেঞ্জ করে রিটে আমরা তদন্ত কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশনা চেয়েছি। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হতে আমরা যে সময় আবেদন করেছি সেটা নিষ্পত্তির জন্য ইউজিসির প্রতি নির্দেশনা চেয়েছি।‘
উপাচার্য কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত কমিটি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এর জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে করা হয় আরও একটি কমিটি।
তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ ছিল। পরে সেগুলোর মধ্যে ২৯টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয় এই কমিটিকে।
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির তদন্ত দল
জনবল নিয়োগ, রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়া, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে গত ১৪ মার্চ ক্যাম্পাসে যায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি।
৪৫টি অভিযোগ তুলে ধরে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। তার প্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি করা হয়।
এই তদন্ত করায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ বক্তব্য দেয়ায় গত ৪ মার্চ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়।
২০১৭ সালের ১৪ জুন নিয়োগ পাওয়া কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়েও যান না। এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র-শিক্ষকরা নানা সময় নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তবে কলিমুল্লাহর দাবি, উপাচার্য পদটি আবাসিক নয়। ফলে তাকে রংপুরে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
তার আইনজীবীর দাবি, ইউজিসি যে তদন্ত করেছে, তাতে তার মক্কেলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
শহীদুল ইসলাম বলেন, `আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা বা তদন্ত শেষ করা ন্যাচারাল জাস্টিসের মধ্যে পড়ে না। এটি সংবিধানের ৩১ ধারার পরিপন্থী।
‘এ অবস্থায় আমরা আদালতের কাছে নির্দেশনা চেয়েছি। এখনও শুনানির জন্য আসেনি। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে।’