হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে উপাচার্য আখতারুজ্জামানের কাছে গিয়ে তার একটি বক্তব্যে আহত হয়েছেন ছাত্ররা। সামাজিক মাধ্যমে সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষোভ দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে উপাচার্যের যুক্তি, তাকে ভুল বোঝা হয়েছে। তিনি সবাইকে উদ্দেশ করে কথাটি বলেননি। কয়েকজন ছাত্র খুব হট্টগোল করছিলেন, তাদের উদ্দেশ করে মুরব্বির মতো করে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার ছেলের মতো। তাদের আমি ধারণ করি। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি এর সীমা প্রশস্ত রাখি।’
হল খোলার দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি নিয়ে যান উপাচার্যের কাছে। তাদের অভিযোগ, এ সময় উপাচার্য তাদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ এবং পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের’ মুখপাত্র আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ভদ্রভাবে স্যারের কাছে দাবি নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও স্যার আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করেছেন। যারা অনলাইন অফলাইনে আন্দোলন করছেন, তাদের মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেছেন।’
হল খোলাসংশ্লিষ্ট অনেকের অনলাইন পোস্টের ব্যাপারে তিনি (উপাচার্য) বলেন, ‘এরা পরিবার থেকে খারাপ শিক্ষা পাওয়া স্টুডেন্ট’। যারা এ ধরনের মন্তব্য করে তাদের খতিয়ে দেখে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রক্টরকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা ছিল ২৩ মে। হল খোলার কথা ছিল ১৭ মে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সব পরিকল্পরা ভণ্ডুল করে দিয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে টিকা সরবরাহে ভারতের সিরামের অপারগতা।
সরকার এখন চীনের কাছ থেকে টিকা কিনতে যাচ্ছে। আর সব ছাত্র-শিক্ষককে টিকা দেয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর কথা জানানো হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পরীক্ষা দিতে না পারায় তারা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না। এতে করে বহু পরিবার চাপে আছে।
এ বিষয়ে ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন হয়ে আসছে।
উপাচার্যের কী ব্যাখ্যা
তবে নিউজবাংলাকে উপাচার্য বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীর উদ্দেশে এসব কথা বলিনি। এগুলো খুবই আজেবাজে এবং অসত্য কথা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কিছু স্থিরচিত্র এবং ভিডিও আমি তাদের দেখিয়েছি। সেখানে একটা ছেলে খুবই উগ্র ভাষায় স্লোগান দিচ্ছিল। আর অনেকে অনলাইনে অশোভন ভাষায় কটূক্তি করছে। সেগুলো নিয়ে বলেছি, এ ধরনের ভাষা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যায় না। এগুলোর জন্য পারিবারিক শিক্ষার প্রয়োজন। তারাও বলেছে, এগুলো ঠিক হয়নি। তারা সতর্ক হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান
উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম নাফিস।
নাফিস উপাচার্যকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন এবং ডাটা কেনার জন্য ঋণ এবং অসহায় শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা বলা হলেও সেটি দেয়া হয়নি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নাফিসের এই কথার উত্তরে উপাচার্য বলেছেন, তোমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা খেয়ে চলতে চাও?’
এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাফিস বলেন, তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
এ বক্তব্যের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, ‘নাফিস আমার বিভাগের শিক্ষার্থী। আমি সাধারণত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপাচার্য থাকি না, মুরব্বি হয়ে যাই। বাড়িতে আমার ছেলের সঙ্গে যে রকম, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সে রকম আচরণ করি।
‘মুরব্বি হয়ে কত কথা যে বলি! তবে আমি আমার ছাত্রদের ধারণ করি। তাদের প্রতি আমার সব সময় আস্থা রয়েছে। আশা করি আমার প্রতিও তাদের আস্থা আছে।’
হল খোলা সরকারের হাতে
হল খোলার বিষয়ে উপাচার্য কী বলেছেন- জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে উপাচার্য আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি। উনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিষয়। এখানে তাদের করার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যের পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের দাবিদাওয়া মেটানোর যোগ্য মনে করি না। এখন থেকে আমরা সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরব। তাই আগামী রোববার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। এ বিষয়ে আগামী শনিবার বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।’