ইউনিক আইডির তথ্যছক পূরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ জমা দেয়াসংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত করেছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডির তথ্যছক পূরণ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের অনলাইন জন্মসনদও জমা দিতে বলা হয়। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হওয়া তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে আরও জানানো হয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান সমাপ্ত না হওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত তথ্যছক পূরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হলে ইউনিক আইডির তথ্যছক পূরণের কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
ইউনিক আইডি কেন?
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে।
এ জন্য ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘ইউনিক আইডি তথ্য ফরম’ চূড়ান্ত করেছে ব্যানবেইস।
স্ট্যাবলিশমেন্ট অফ ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা চার পৃষ্ঠার এই ফরমে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুল আলম।
ফরমে শিক্ষার্থীর নাম, জন্মনিবন্ধন নম্বর, জন্মস্থান, জেন্ডার, জাতীয়তা, ধর্ম, অধ্যয়নরত শ্রেণি, রোল নম্বর, বৈবাহিক অবস্থা, প্রতিবন্ধিতা (ডিজঅ্যাবিলিটি), রক্তের গ্রুপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি না, মা-বাবার নামসহ বেশ কিছু তথ্যের ঘর রয়েছে।
এর মধ্যে কয়েকটি ঘরে উল্লেখ করা ‘অপশন’ ফেসবুকে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফরমে জেন্ডারের ক্ষেত্রে পুরুষ/মহিলার পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ অপশনও রাখা হয়েছে। ধর্মের ক্ষেত্রে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ছাড়াও ‘নট আ বিলিভার’, ‘রিফিউজ টু ডিসক্লোজ’ ও ‘অন্যান্য’ অপশন রয়েছে।
বৈবাহিক অবস্থার অপশন হিসেবে অবিবাহিত, বিবাহিত, বিধবা, বিপত্মীক ছাড়াও স্বামী-স্ত্রী পৃথক বসবাস, তালাকপ্রাপ্ত, বিবাহবিচ্ছেদের ঘর রয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডি জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, ‘কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলেই সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেলের আওতায় তার জন্মনিবন্ধন হয়। আর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় সবার জন্য আছে জাতীয় পরিচয়পত্র। কিন্তু যারা প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮-এর নিচে, তারা এই সিস্টেমের বাইরে। তাদের সিস্টেমের মধ্যে আনতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ব্যানবেইসকে দায়িত্ব দিয়েছে।’
তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ডেটাবেজ তৈরি করে ইউনিক আইডি দেয়া হবে।
এ ছাড়া প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে যারা পড়ছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহের এই ফরম তৈরির বিষয়ে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘সবকিছুই নাগরিকের মৌলিক উপাত্ত কাঠামো (সিটিজেন কোর ডেটা স্ট্রাকচার, সিসিডিএস) অনুযায়ী করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় অনুবিভাগ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর আমাদের এই প্রকল্পের কমিটিতে এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।’