করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি বাড়িয়ে ১২ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে ১৩ জুন থেকেই স্কুল-কলেজ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার
স্কুল-কলেজ খোলার পর চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ খুললে ক্লাস করার ব্যাপারে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তারা সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন ক্লাস করবে।
তিনি বলেন, ‘এ বছরও অটোপাস দেয়ার ইচ্ছা সরকারের নেই। গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা কিন্তু ক্লাস করেছিল। এ বছরের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পায়নি। পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে পরীক্ষা নিয়েই ফল প্রকাশ করা হবে।’
‘চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ৮৪ দিন ক্লাসের পর পরীক্ষায় দেবে। ক্লাস শেষ হওয়ার পর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা যথাক্রমে ১৫০ দিন ও ১৮০ দিন ক্লাস করবে। এর দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা দেবে।’
মন্ত্রী আরও জানান, ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিকও খুলবে ১৩ জুন
সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৩ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলে দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও টিভি, কমিউনিটি রেডিওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এতে সব শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেএসসির পরীক্ষা অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়ণ
সংবাদ সম্মেলনে ডা. দীপু মনি জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করা হবে।
টিকা দেয়া হলে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের দেয়া সম্পন্ন হলেই আবাসিক হলযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হবে।
‘আবাসিক শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে সে তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে চেয়েছি। তবে যাদের বয়স ৪০ এর বেশি, বেশিরভাগই টিকা নিয়েছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের যাদের বয়স যাদের ৪০ এর কম তাদের বিশেষ বিচেবচনায় টিকা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। নতুন টিকা এলেই তারা অগ্রাধিকার পাবে। এক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে। এ সংখ্যাটা যেহেতু বিশাল নয়, তাই দ্রুত তাদের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে পারব বলে আশা করছি।’
‘এ বিষয়ে খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
‘শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে। অনলাইন ক্লাস শুরুর পর ডিজিটাল ডিভাইসের যে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছিল সেটি অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। শতকরা ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ডা. দীপুমনি বলেন, ১২ জুন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকছে—এমন স্ক্রল আপনারা টিভিতে সম্প্রচার করছেন। এটি না করে আপনারা বলেন, ১৩ জুন থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এটি চলছে। বন্ধ রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই। মাঝখানে করোনা পরিস্থিতি কিছু ভালো হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে যায়।
‘ঈদে বাড়ি যাওয়ার বিভিন্ন জেলায় সংক্রমনের হার বেড়েছে। এসব বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে অনেকেই মতামত দিচ্ছেন, এটিও আমাদের মাথায় আছে। নানা অনিশ্চিয়তা ও সংশয়ের মধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ অন্য কর্মকর্তারা।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ দফায় দফায় বাড়িয়ে আগামী ১২জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।