বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাফিজের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চায় প্রগতিশীল ছাত্র জোট

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ২২:০৭

এরকম মর্মান্তিক ঘটনা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ও গাফিলতি দুঃখজনক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি তোলেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ঢাবি শাখার নেতা-কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠ তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ঢাবি শাখার নেতা-কর্মীরা।

সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সোহাইল আহমেদ শুভ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় তারা। বিজ্ঞপ্তিতে তারা ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানান।

জোটের নেতারা জানান, গত ১৫ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর পুলিশ সদস্যরা তার মৃতদেহ অজ্ঞাত হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রেখে দেয় ২৩ মে পর্যন্ত। অথচ এই আটদিনেও নিখোঁজ হাফিজুর রহমানের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টোরিয়াল কর্তৃপক্ষ কোনরকম অবগত ছিলনা।

এরকম মর্মান্তিক ঘটনা সত্ত্বেও প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ও গাফিলতি দুঃখজনক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তারা।

এসময় এক নেতা বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কোন নিরাপত্তা নেই। এবছরের শুরুতেও শহীদ মিনার এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে।

এর ব্যতয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন জোটের নেতারা।

হাফিজুরের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবে ৷ এ প্রতিবাদে সবাইকে উপস্থিত থাকার আহ্বানও জানানো হয়।

নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের যে মরদেহ স্বজনরা শনাক্ত করেছেন, সেটির গলা দেখা গেছে কাটা।

প্রত্যক্ষদর্শী আর পুলিশের ভাষ্য, হাফিজ আত্মহত্যা করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজে কেটেছেন।

তবে কেন তিনি এই কাজ করতে গেলেন, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কোনো ধারণা করতে পারছেন না কেউ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাফিজ মারা গেছেন ১৫ মে রাতে। কিন্তু তার পরিচয় জানা ছিল না। তাই মরদেহ ছিল ফ্রিজারে।

তবে সেই ফ্রিজারটি নষ্ট। আর এ কারণে মরদেহে দেখা গেছে পচন। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এর মধ্যেও স্বজনরা এসে শনাক্ত করেছেন তাদের প্রিয়জনকে।

রোববার সন্ধ্যায় হাফিজের স্বজনরা এসে পৌঁছান হাসপাতালে।

সেখানকার তথ্য বলছে, হাফিজকে হাসপাতালে আনা হয় গত ১৫ মে। তাকে যখন সেখানে নিয়ে আসা হয়, তখন গলা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান সেদিনই।

পরের দিন ১৬ তারিখ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহবাগ থানার কনস্টেবল সালাউদ্দিন আহমেদ খান এবং উপপরিদর্শক আব্বাস আলী তার মরদেহ মর্গে নিয়ে আসেন। ১৭ তারিখ হাফিজের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিউজবাংলার হাতে আসা সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাফিজুরের পরনে ছাই রঙের হাফপ্যান্ট ছিল। গলায় কাটা দাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

হাফিজের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে- এই প্রশ্নের মধ্যে নার্গিস আক্তার নামে এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার, যিনি নিজেকে হাফিজের এই পরিণতির প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছেন।

নার্গিস বলেন, ‘আমরা ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় শহীদ মিনারের পাশে ছিলাম। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ দেখলাম ছেলেটা (হাফিজ) একজন ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কেটে দেয়। এরপর দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। পরে স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের বর্ণনাও একই রকম।

তিনি বলেন, ‘১৫ তারিখ সন্ধ্যায় দায়িত্বরত পুলিশ টিম থেকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। বলা হয়, হাফপ্যান্ট পরিহিত একটা ছেলে নিজের গলা নিজে কেটে দিয়েছে। আর সে চিৎকার করছে, আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও বলে। পরে আমি ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি সে দৌড়াচ্ছে। সে শহীদ মিনার থেকে ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সি গেটের দিকে দৌড়াচ্ছিল।’

ওসি বলেন, ‘আমরা ডাবওয়ালার সাথে কথা বলেছি। সে ডাবওয়ালা আমাদের বলেছে, ছেলেটা হঠাৎ এসে ডাব কাটার দা নিয়ে নিজের গলায় ধরে। ডাবওয়ালা ভেবেছে সে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। পরে সত্যি সত্যি গলা কেটে ফেলে।’

ওসি জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াচ্ছেন দেখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের ফটকের কাছে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

কেন হাফিজের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি- এই প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা প্রচুর লাশ আসে। সবার পরিচয় জানা যায় না।’

পচা মরদেহে পোকা

বর্তমানে হাফিজের মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। মরদেহ পচে পোকা কিলবিল করছে।

মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মর্গের ফ্রিজ অনেকদিন ধরে অচল। তাই লাশটা পচে গেছে।’

কে এই হাফিজ

হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।

হাফিজের সহপাঠীদের তথ্য বলছে, গত ১৫ মে দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা শেষে রাত ৮-৯টার দিকে তার নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন।

এরপর থেকে হাফিজের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মীর লোকমান নিউজবাংলাকে বলেন, গত ১৫ মে তিনি (হাফিজ) কার্জন হলে বসে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর তিনি বাড়ি যেতে চান। বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ।

তিনি বলেন, ‘আমরা তার পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। তার মা দুশ্চিন্তায় কথাও বলতে পারছেন না।’

হাফিজুরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। এ ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার গত শুক্রবার কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এ বিভাগের আরো খবর