বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অবৈধ’ নিয়োগ স্থগিত, রাবিতে তদন্ত দল

  •    
  • ৮ মে, ২০২১ ১৮:৩১

সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগকে চাকরি দিয়েছি। আমি কমিটিকে বলেছি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের ক্রমাগত দাবি এবং চাপ থেকে আমি মানবিকভাবে বোধ করেছি যে তাদের চাকরিটা পাওয়া উচিত।’

শেষ কার্যদিবসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহানের দেয়া বিতর্কিত গণনিয়োগের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন। একই সঙ্গে নিয়োগের ঘটনা তদন্ত করতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

এদিন দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশ দেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের ৬ মে তারিখে পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ৫ ও ৬ মে ইস্যুকৃত সব এডহকভিত্তিক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

‘এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত নিয়োগপত্রে যোগদান এবং তৎসংশ্লিষ্ট সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হলো।’

রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলছে। এটি শেষ না পর্যন্ত সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।এর আগে শনিবার সকালে উপাচার্যের দেয়া নিয়োগের গণতদন্ত করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর নেতৃত্বে কমিটির পরিদর্শন দলে আরও ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর তারা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার দপ্তরে যান। পৌনে ১২টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। দুপুরের পর তদন্ত কমিটির সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্পাসে যান সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান।

এসময় বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এছাড়া যেসব বিভাগ বা দপ্তরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সে সব দপ্তরের প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। নিয়োগে জড়িতরা তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি ড. দিনবন্ধু পাল তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের জানান, সঙ্গীত বিভাগে এডহকে একজনকে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতা জানতে চায় তদন্ত কমিটি। তিনি জানিয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসব জেনেছেন। এ নিয়ে প্ল্যানিং কমিটির কোনো সভাও হয়নি।

তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ ছিল কিনা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম তদন্ত কমিটিকে জানান, এই বিতর্কিত নিয়োগের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কমিটিকে জানিয়েছি এই নিয়োগগুলো হওয়ার দরকার ছিল। দীর্ঘদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হয়নি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে ২০১৩ সালের পর আট বছরে কোনো নিয়োগ হয়নি। আমরা এই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে করোনা চলে আসায় আমরা নিয়োগ বন্ধ করে দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য এই নিয়োগ না আরও দরকার। কিছু শিক্ষক শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসছেন রাবির সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান

এম আব্দুস সোবহান জানান, যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের এটি প্রাপ্য বলে মনে করেন তিনি।

সদ্য সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগকে চাকরি দিয়েছি। আমি কমিটিকে বলেছি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের ক্রমাগত দাবি এবং চাপ থেকে আমি মানবিকভাবে বোধ করেছি যে তাদের চাকরিটা পাওয়া উচিত।’

নিয়োগ পাওয়া সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কিংবা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান বলে দাবি করেন এম আব্দুস সোবহান।

তার এই বক্তব্যের সময় নিয়োগ পাওয়ারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তিনি প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্লোগান দিয়ে তাকে এগিয়ে দেন নিয়োগ পাওয়ারা।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আমরা এখানে এসেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করেছি। কাগজপত্র দেখেছি। আমরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করব, এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিব। কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণ নয়, আমরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরব।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে গণনিয়োগ দেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। ওই দিনই মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ওইদিন মোট কতজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল।

বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছিল ১৪১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে শনিবার সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা নিশ্চিত করেন।নতুন চাকরি পেয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নিয়োগ পাওয়াদের অনেকে। তাদের অনেকেই বর্তমানে অন্য কোনো চাকরিতে জড়িত। শেষ পর্যন্ত এই চাকরি স্থায়ী হবে কি না সেটি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করায় সংশয় বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীতে কর্মরত এক সাংবাদিক বলেন, ‘অনেক দিন ধরে প্রত্যাশা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকরি হবে। সে জন্য লেগেও ছিলাম। চাকরি হলোও। তবে চাকরির নিরাপত্তা কে দেবে সেই চিন্তায় আছি।’

সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া এনায়েত করিম বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ নিয়ম মেনেই দেয়া হয়েছে। এর জন্য যে যোগ্যতা দরকার সেই ভিত্তিতেই দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটি বাতিল হওয়ার নয়।

নিয়োগ টেকা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শঙ্কা থাকেই। যদি ষড়যন্ত্রকারীরা বেশি শক্তিশালী হয় তাহলে অন্যায় সিদ্ধান্ত আসতেই পারে। আমাদের যোগ্যতার বলেই নিয়োগ পেয়েছি। এটি বাতিল করা সহজ হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর