করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় না আনতে পারায় ১৭ মে খুলছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো। শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করেই হল খুলতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উপাচার্য বলেন, ‘১৭ মে আবাসিক হল খোলা সম্ভব নয়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি না কমলে এবং শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় না আনা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা হবে না।’
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভা শুরু হয়। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন আগামী ১৭ মে থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেওয়া হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, ‘এপ্রিল মাস শেষ হতে চলেছে। এই অবস্থায় আগামী ১৭ দিনে শিক্ষার্থীদের দুই ডোজ করে টিকা দেয়া সম্ভব না। সেজন্য হল খোলার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করেই আবাসিক হল খোলা হবে।’
প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে কী কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় না এনে পূর্ব ঘোষিত সময়ে হল না খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এ ছাড়া, হল খুললে শিক্ষার্থীদের কীভাবে আবাসিকে সিট দেয়া হবে, হলে থাকা বহিরাগতদের বের করে দেয়া ও হলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
এরপর একই দিন বেলা দুইটায় সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আগামী ১৭ মে থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে থেকে।’ তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার উপরও গুরুত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তবে হল খোলার পূর্বঘোষিত সময় ঘনিয়ে আসা স্বত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে না পারা এবং সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ মার্চ শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ৩১ মার্চের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে নিবন্ধন করতে বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে ২৬ হাজার শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেন।
সেই তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া৷
গত ২০ এপ্রিল তিনি নিউজবাংলাকে জানান, শিক্ষার্থীদের তালিকা তারা ইউজিসিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমন্বয় করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব যেটুকু ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় সেটুকু করেছে৷
মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. মো. আলমগীর গত ২০ এপ্রিল জানান, ২৬ হাজার ঢাবি শিক্ষার্থীর তালিকা তারা পেয়েছেন। গত ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের তালিকাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঞ্জুরী কমিশনের পাঠানো ঢাবি শিক্ষার্থীদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেয়েছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি গত ২৩ এপ্রিল নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, তারা ২৬ হাজার ঢাবি শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে এখনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।