বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে যেভাবে বিষোদগার করেছেন তা অনভিপ্রেত বলছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসি নিয়ে কলিমউল্লাহর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে শনিবার বিবৃতি দিয়েছে ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগ।
ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউজিসির তদন্ত কমিটি পেশাদার মনোভাব নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, সরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে।
‘তবে গত ৪ মার্চ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমন মন্তব্য খুবই দুঃখজনক।’
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের এক বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য ‘বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের’ অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা।
নকশা পরিবর্তনসহ এসব প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়া কলিমউল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত কমিটিও অনিয়মের সত্যতা পায়। এ প্রতিবেদন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কলিমউল্লাহ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। তার দাবি, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির পরামর্শে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘মিথ্যা প্রতিবেদনটি’ করেছে ইউজিসি।
কলিমউল্লাহর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলেই বিবৃতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এবার বিবৃতি দিল ইউজিসি। এতে বলা হয়, তদন্তটি দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী বা অন্য কেউ প্রভাব বিস্তার করার কোনো ধরনের সুযোগ নেই।
‘কমিশন দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায় যে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
‘সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ শিক্ষামন্ত্রী ও তদন্ত কমিটি নিয়ে ব্যক্তিগত বিষোদগার করেছেন তা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। উপাচার্যের মতো দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে কোনোভাবেই এটি প্রত্যাশিত নয়।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ব্যাপারে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি কখনও কোনো বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। কোনো উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে এমন কোনো ধরনের পরামর্শ বা নির্দেশনা তিনি কখনই দেননি।