উপাচার্যের পদ আবাসিক নয়, রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব আবাসিক বলে মন্তব্য করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কলিমউল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আমি একজন কাজ পাগল মানুষ। দায়িত্বে অবহেলা আমার চরিত্রে নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উপাচার্যের পদ আবাসিক নয়, রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব আবাসিক।’২ মার্চ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারে পাওয়া বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে বেরোবি উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি। এ ঘটনার দুই দিন পর এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, ‘আগের উপাচার্যের সময় একটি বিশেষ এলাকা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাই অবরোধ-আন্দোলন করে আসছেন। আমাকে ঘেরাও করা হতে পারে, এ জন্য ক্যাম্পাসে আমাকে পাওয়া যায় না।’
তাহলে কী ভয় পেয়েই ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘এমনিতেই এক বছর করোনা পরিস্থিতি ছিল। শারীরিক দূরত্বের কারণে ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়নি। উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগেই ক্যাম্পাসে আন্দোলন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমার আর সাড়ে তিন মাসের মেয়াদ আছে। এ সময় ঘেরাও-আন্দোলন হতে পারে, তাই ক্যাম্পাসে আমার উপস্থিতি কম।’
উপাচার্যকে বছরের অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- আমাকে পাওয়া যায় না, আমি নিখোঁজ হয়ে যাই, আমি ঢাকায় থাকি।
‘আমি প্রতিদিন ২০-২২ ঘণ্টা কাজ করি। ঢাকায় থাকলে লিয়াঁজো অফিসে কাজ করি। রংপুরে থাকলে বাসায় থেকে কাজ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাভাবিকভাবেই সব চলছিল। কিন্তু মিথ্যা ও অসংলগ্ন যেসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন কলিমউল্লাহ।
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও আমরা পাইনি। এর আগেই গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ করা হলো।’
আরও পড়ুন: ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের এক বৈঠকে বেরোবির ছাত্রীদের একটি হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার আমলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রীদের ১০ তলা হল নির্মাণ করে সেখানে সর্বাধুনিক সুযোগসুবিধা রাখার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: ভিসি কলিমুল্লাহকে ক্যাম্পাসে ‘আসতে হবে’
একইভাবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটকেও আধুনিক মানসম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে আধুনিক যুগোপযোগী নকশা তৈরি করে প্রকল্পটি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবীর আমলে অনুমোদন দেয়া হয়। এই দুই স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।