বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্কুলেছাত্র কমছে কেন, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১২:১৬

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য বর্ধিত হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এ দুই পর্যায়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, ছেলেদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রের সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে, তার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তিসহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে রোববার সকালে এমন জবাব চান তিনি।

অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য বর্ধিত হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জেন্ডার সমতা অর্জন করায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।

‘এখানে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, ছেলেদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এটা যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের জেন্ডার সমতাটা একটু অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেক স্কুলে দেখা যায়, মেয়ে শিক্ষার্থী বেশি হয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা কমে যাচ্ছে। তবে ছেলেরা কেন কমে যাচ্ছে, এটা আমাদের দেখা দরকার।

‘এ বিষয়টা অবশ্যই একটু নজরে দেবেন সকলে। আমরা মনে করি, অভিভাবক, শিক্ষক সকলকেই এটা দেখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ ৮৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং ভর্তি সহায়তা বাবদ ১২৩ শিক্ষার্থীকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান বাবদ ৪ শিক্ষার্থীকে ২ লাখ টাকাসহ ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা বিতরণ করা হয়।

শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দিতে নির্দেশ

স্কুল-কলেজের কার্যক্রম শুরু করতে দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কোভিডের জন্য এখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। তবে আমরা আশা করছি যে, আগামী ৩০ মার্চ আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সক্ষম হব।

‘ইতিমধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যত শিক্ষক-কর্মচারী যারা আছে সকলকেই টিকা নিতে হবে। এর জন্য ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। টিকা সবাইকে দেয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আর ইউনিভার্সিটি বা কলেজে ডব্লিউএইচও এর নির্দেশ মোতাবেক যে বয়স পর্যন্ত টিকা নেয়া যাবে না তার উপরের বয়সের যারা, সেসব শিক্ষার্থীকেও টিকা দেয়া হবে। কাজেই সকলেই সুরক্ষিত থাকুক এটাই আমরা চাই।’

শিক্ষা খরচ নয়, বিনিয়োগ

দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী। আর এ কারণেই শিক্ষাকে খরচের পরিবর্তে বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘জাতির পিতার চিন্তা আদর্শ নিয়েই আমরা চলি। শিক্ষার খরচকে আমরা খরচ মনে করি না, বিনিয়োগ মনে করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে স্বীকৃতি পেয়েছি এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

‘ধরে রাখার জন্যই দরকার শিক্ষার প্রসার এবং উপযুক্ত দক্ষ নাগরিক। আমরা সেই দক্ষ ও উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’

শিক্ষার উন্নয়নে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা বিত্তশালী তারাও এগিয়ে আসবেন। নিজ নিজ এলাকা বা নিজ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যেখানে পড়াশোনা করেছেন, সে সেখানে উন্নয়নে মনোযোগী হবেন।

‘যেখান থেকে লেখাপড়া শিখে আজ বিত্তশালী হয়েছে সেই জায়গাগুলির প্রতি যদি সবাই যত্নশীল হয়, তাহলে মনে হয় আর সমস্যা হয় না।’

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষার প্রসারে নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সমালোচনা করেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের।

তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা সরকার গঠন করে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে। এ জন্য নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি প্রকল্প আমরা হাতে নিই। সেখানে আমরা আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক বা মসজিদ- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এমনকি বিভিন্ন এনজিওকেও আমরা কাজে লাগাই, বয়স্কদের শিক্ষা দেয়ার জন্য।

‘আমাদের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল একেকটা জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করা হবে। সেখানে ৪৫ বছরের নিচে বয়স যাদের কেউ যদি নিরক্ষর থাকে, তাকে সাক্ষরজ্ঞান দেয়া হবে। সে প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করতে শুরু করি এবং শুভ ফলও আমরা পেতে শুরু করি। অনেক জেলায় তখন অল্প সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এর কারণে ইউনেসকোর পক্ষ থেকে আমরা একটা পুরস্কারও পাই। আবার সেই পুরস্কারের টাকা দিয়ে আমরা বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করি। আমরা যখন সরকার গঠন করি মাত্র ৪৫ ভাগ ছিল সাক্ষরতার হার। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেটা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হই।

‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো ২০০১-এ আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট আসল। আমাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিল।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকার গঠন করি, আমরা পুনরায় উদ্যোগ নেই। সেই সময়েই এই ট্রাস্ট ফান্ড করবার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেখানে এই কথাটা আমি লিখেছিলাম সরকার বদল হলেও যেন কেউ এটা বন্ধ করতে না পারে।

‘কারণ আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। অনেকগুলো গণমুখী কাজ আমরা নিয়েছিলাম হাতে। বিএনপি সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এ জন্য এখন থেকে যাই করি, চেষ্টা করি যে সরকার বদল হলেও যেন এগুলো বন্ধ না হয়, সে প্রচেষ্টা আমাদের সবসময় রয়েছে।’

প্রথম মেয়াদে সরকারে এসে সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সাথে সাথে সারা দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থাও নেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, বিজ্ঞান শিক্ষায় মানুষের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য আইন পাস করি, কাজও শুরু করি।

‘এর মধ্যে গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বিএনপি বন্ধ করে দেয়। ১২টার মধ্যে দুটো আমরা শেষ করেছিলাম। একটি দিনাজপুরের হাজী দানেশ এবং পটুয়াখালীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ দুটিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আমার নির্দেশনা ছিল, যেটা কৃষির ওপর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা দেবে এবং গবেষণা হবে।’

শিক্ষায় বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ মানবশক্তি সৃষ্টিই সরকারের লক্ষ্য বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা প্রসারে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।

‘অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা প্রত্যেক জেলায় করে দিচ্ছি যাতে ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের চোখের সামনে থেকে পড়াশোনা করতে পারে। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা বহুমুখী করে দিচ্ছি। যেমন টেক্সটাইল করছি, ডিজিটাল করছি, আমাদের প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও আমরা করে দিচ্ছি। ফ্যাশন ডিজাইন থেকে শুরু করে অর্থাৎ আধুনিক যুগে কী কী ধরনের বিষয় লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, শুধু দেশে না বিদেশেও।

‘আমাদের এ জন্য আরও বেশি প্রয়োজন, আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানে অনেক টেকনিক্যাল লোক লাগবে। দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। সেই জনশক্তিই আমরা সৃষ্টি করতে চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর