করোনাভাইরাস সংকটের কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকা দেশের সব স্কুল-কলেজ আগামী ৩০ মার্চ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শনিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমরা ইনশা আল্লাহ আগামী মার্চ মাসের ৩০ তারিখে খুলে দেব।’
গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে সাত দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সব শেষ সিদ্ধান্ত ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্কুল-কলেজ খোলার পর ক্লাস শুরুর প্রক্রিয়া কেমন হবে, সেটাও জানালেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আগেও যেভাবে বলেছি, পর্যায়ক্রমে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণিকে হয়তো আমরা প্রতিদিন (ক্লাসে) আনব। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং দ্বাদশকে প্রতিদিন আনব।
‘বাকি ক্লাসগুলোতে হয়তো সপ্তাহে এক দিন প্রথমে আসবে। তার কয়েক দিন পর থেকে তারা সপ্তাহে দুদিন করে আসবে। পর্যায়ক্রমে আমরা স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাব।’
তবে আপাতত প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে না বলে জানালেন মন্ত্রী। বললেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিছন্নতা থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে বলে জানালেন মন্ত্রী।
সব শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেয়ার বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী মন্ত্রী।
‘প্রাথমিকের প্রায় দুই লাখ শিক্ষক ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ নিয়ে নিয়েছে।...স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সহযোগিতায় অবশিষ্ট শিক্ষদের নিবন্ধনের মধ্যে দিয়ে টিকা নিশ্চিত করা হবে।’
এসএসসি-এইচএসসির জন্য সিলেবাস প্রণয়ন
শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৮০ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
‘তাদের ৬০ ও ৮০ কর্মদিবসে ক্লাস করানোর জন্য আমরা চেষ্টা করব। তাদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাসে আনার চেষ্টা করব। আর বাকি ক্লাসগুলো হয়তো শুরুতে তারা এক দিন আসবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২২০টা আবাসিক হল আছে। আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। এসব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগও হয়েছে।
‘আমরা প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির মাধ্যমে গত বুধবার চিঠি পাঠিয়েছি। তারা সকল আবাসিক ছাত্রের নাম-ঠিকানাসহ ন্যাশনাল আইডি নম্বরসহ আমাদের কাছে তালিকা পাঠাবেন এটা শুধু টিকার জন্য। সে তালিকা আমরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে পাঠাব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
‘শিক্ষার্থীরা যেখানেই থাকুক সেখান থেকেই তারা নিবন্ধন করতে পারবে এবং নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে। আমরা আশা করছি, ১৭ মে এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে পারব।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ইঙ্গিত ছিল আগেই
এর আগে, ২২ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল কলেজগুলোকে ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর, ৩০ জানুয়ারি এইচএসসি ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আগামী মার্চ বা এপ্রিলের দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
‘করোনাভাইরাস আমরা যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছি, সবাই যদি আরেকটু মেনে চলেন আমরা এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব এবং খুব দ্রুতই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারব। আমরা আশা করছি যে, হয়তো আগামী মার্চ-এপ্রিল, আমরা মার্চ মাসটা দেখব।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শনিবারের বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান, আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে।