জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক, ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ সব বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে বরিশাল ও মাদারীপুরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
বরিশালে ব্রজমোহন কলেজের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিক থেকে বিক্ষোভ শুরু করে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় কলেজের সামনের সড়কে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া নানা আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ব্রজমোহন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নুহাশ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনা মহামারির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। আমাদের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় কোথাও চাকরির আবেদনও করতে পারছি না।
‘আমরা চাই অবিলম্বে আমাদের বাকি পরীক্ষাগুলো নেয়া হোক। আর তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।’
আরও পড়ুন: ২৪ মে থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা
দর্শন বিভাগের ছাত্রী শারমিন বীথি বলেন, ‘অনেক পিছিয়ে পড়েছি। আর না। আমাদের পরীক্ষাসহ অন্য সব বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা সরব না।’
প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধের পর বরিশালে ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের আশ্বাসে দুপুর দুইটার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে। তাদের দাবি না মানলে শনিবার সকাল থেকে আবার সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
মাদারীপুরে সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ করেন। ছবি: নিউজবাংলা
মাদারীপুর
মাদারীপুরে সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে কলেজগেট সংলগ্ন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মাদারীপুর-শরীয়তপুর প্রধান সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত সব পরীক্ষা আবার চালু করার জোর দাবি জানান। এ সময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং দ্রুত পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী নাঈম সরদার বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা সেশন জটে পড়েছি। যখন আবার পরীক্ষা শুরু হলো, হঠাৎ সরকার সব পরীক্ষা বন্ধ করে দিল। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই আমরা দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী তানভীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের পরীক্ষার বছরই করোনা আসে। লকডাউনে এমনিতেই আমাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপর আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হয়ে বন্ধ করে দিল। আমরা চাই অতি দ্রুত আবার পরীক্ষা শুরু হোক।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় বর্ষ স্নাতক (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়। পরীক্ষা চলার কথা ছিল ২৩ মার্চ পর্যন্ত।
আর ২০১৯ সালের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গত ১৭ জানুয়ারি শুরু হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে।
তবে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ মে থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষাও শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।