সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেয়ার তারিখ জানালেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি ভিন্ন। ক্যাম্পাসের বাইরে তারা নিরাপদ নন, তাই হলে থাকতে চান। এক্ষেত্রে কিছু হলে দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
জাবি প্রশাসন সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তা মানেননি শিক্ষার্থীরা। তারা সোমবারও হলেই অবস্থান করছেন।
গত শুক্রবার ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী গেরুয়া গ্রামে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। শনিবার তালা ভেঙে হলের ভিতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা অবস্থানও শুরু করেন।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, আগামী ১৭ মে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেয়া হবে। ক্লাস শুরু হবে ২৪ মে থেকে।
জাবি শিক্ষার্থীরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানালেও তারা হল ছাড়তে নারাজ। নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে হল খুলে দেয়ার দাবি তাদের। হল ত্যাগের নির্দেশকে প্রশাসনের প্রহসন উল্লেখ করে পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলা আছে। আমরা সেই বক্তব্যগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বলব।’
তিনি শিক্ষামন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যদি তারপরেও না শোনে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত যে শৃঙ্খলাবিধি আছে, সেই বিধি অনুযায়ী উনি ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তারপরেও যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, রাষ্ট্রীয় প্রচলিত আইনের প্রয়োগের কথাও তিনি বলেছেন।’
ফিরোজ আরও বলেন, ‘তাই আমরা চাই না আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এরকম কিছুতে যাই। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সরকারি নির্দেশনা মেনেই দায়িত্বশীল আচরণ করবে। আমাদের বিশ্বাস তারা সরকারি নির্দেশনা মানবে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মো. তাবিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, তারা হল ছাড়বেন না। যদি কোনো সমস্যা হয় তবে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
তাবিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারি সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছি। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ জন্য আমরা হলেই থাকতে চাই। আমরা যে দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দিয়েছিলাম, তার কোনোটিই আমরা এখনো বুঝে পাইনি।’
যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় তখন কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। ওই দিন হামলার সময় তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা চাই এই ঘটনার পেছনের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা হোক। হল ত্যাগের নির্দেশনা থেকে সরে আসুক প্রশাসন।’
সোমবার বিকেলেও হলে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এর আগে সকালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙে মেয়েরা হলে প্রবেশ করেন। শনিবার থেকেই ছেলেদের হলগুলোতে ছেলেরা থাকতে শুরু করেছেন।
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী সামিয়া জামান বলেন, ‘অলরেডি সরকারি প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর কিন্তু আমরা আজকে পাঁচটা দাবি করেছি। আরেকটা জিনিস ভুলে গেলে হবে না, আমাদের হলগুলোর সঙ্গে অন্য ভার্সিটির হলগুলোকে এক করলে হবে না। আমরা নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে হলে উঠতে চাচ্ছি। গেরুয়াতে একসঙ্গে ৪০ শিক্ষার্থী যখন আহত হলেন এবং সে ক্ষেত্রে ওইখানে কিন্ত আমরা কোনোভাবেই আর সেইফ না। এই কারণেই কিন্তু আমাদের হলে ওঠা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে; গেরুয়াতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে; ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে; সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
‘ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী এই হামলার সঙ্গে সংযুক্ত আছে এটা বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অজ্ঞাত মামলা তুলে চিহ্নিত ব্যক্তির নামে মামলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা করব।’