মসজিদে ঘোষণা দিয়ে হামলার জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার তালা ভেঙে বন্ধ থাকা আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিক্ষার্থীরা প্রথমে ফজিলাতুন্নেসা হলের তালা ভেঙে ফেলেন। এর পর একে একে সুফিয়া কামাল হল ও প্রীতিলতা হলসহ মেয়েদের অন্যান্য হলগুলোর তালা ভেঙে সামনে এগোতে থাকেন তারা। পরে ছেলেদের আটটি হলের তালাও ভাঙা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আগে মেয়েদের হলের তালা ভেঙেছেন, কারণ মেয়েদের নিরাপত্তা জরুরি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে তালা ভাঙা হয়নি।
বিকালে শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার রাতে মেয়েরা ফজিলাতুন্নেসা হলে থাকবেন। আর ছেলেরা থাকবেন আ ফ ম কামালউদ্দিন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও মওলানা ভাসানী হলে। অন্য হলগুলোর তালা ভাঙা হলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রথম রাতে তারা এই চারটি হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসসংলগ্ন গেরুয়া গ্রামের রাস্তা বন্ধ, আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া ও হামলার বিচারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল নিয়ে বের হন চার-পাঁচশ শিক্ষার্থী। পরে উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানেই চার দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গেরুয়া গ্রামে যাওয়া-আসার যে ফটকটি আছে, সেখানে প্রাচীর তুলে ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া ও আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়ার পাশাপাশি তাদের অন্য দাবিটি হচ্ছে হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগেই হলগুলোর তালা খুলতে থাকেন তারা।
দাবিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচার ও মামলার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।’
হল খুলে দেয়ার বিষয়ে প্রক্টরের বক্তব্য, এটা যেহেতু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার, তাই এ ব্যাপারে উপাচার্য উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাচীর নির্মাণের বিষয়টিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেচনায় আছে বলে জানান ফিরোজ উল হাসান। আর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে প্রশাসন। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
তবে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জাবি প্রশাসন ও গেরুয়া গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত পড়ার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন গ্রাম গেরুয়ার একদল স্থানীয় লোক। এতে আহত হন অন্তত ৩০ জন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে।
হামলার পর গ্রামটি ছাড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। অন্য এলাকায় পরিচিতদের বাসায় রাত যাপন করতে হয় তাদের।