আগামী মে মাস নাগাদ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষা নেয়ার ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কুল খুললে ৯ মে পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অবশ্য ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত করে বলেননি তিনি। জানান, সব কিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার নিজ বাসায় ভার্চুয়ালি সংবাদিকদের সঙ্গে যুক্ত হন মন্ত্রী।
এ সময় তিনি শিক্ষা নিয়ে সরকারের চিন্তা তুলে ধরেন।
গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশে করোনার সংক্রমণ পরীক্ষা পাঁচ শতাংশের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে হলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ধরা যায়।
আবার দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দ্রুত টিকা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলতে পারে। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়।
১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যদি না পারি, ধরেন আমরা মার্চের ১ তারিখে খুললাম তাহলে মে মাসের ১৩-১৪ তারিখের দিকে ঈদ আছে, সে ছুটিটাকে মাথায় রেখে হয়ত আর কিছুদিন পর পর্যন্ত ক্লাস চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে যারা তাদের সপ্তাহে ছয় দিন যেন ক্লাস করাতে পারে।'
রোজায় স্কুল বন্ধ থাকলেও এবার এই মাসেও ক্লাস নিতে চান মন্ত্রী। বলেন, না হলে পরীক্ষা আরও বেশি দেরিতে নিতে হবে। এটাকে ব্যালান্স করতে হবে।
কবে খুলছে স্কুল?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সঠিক তারিখ এখনো বলতে পারছি না। কারণ, সব নির্ভর করছে পরিস্থিতি ওপর।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন অপেক্ষায় আছি, আমাদের জাতীয় পরামর্শক কমিটির কাছে তাদের পরামর্শ নেব।
‘আর এখন তো সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে গেছে। যখনই মনে হবে আমরা এখন স্কুল খুলে দিতে পারি, আর শিক্ষকদেরও যেহেতু টিকা দেয়া হয়ে যাচ্ছে, আশা করি আমরা ঠিক তারিখ বলতে পারছি না, তবে হয়ত খুব সহসাই আমরা খুলতে পারব এমন একটা আশা আমাদের আছে।’
পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত হচ্ছে
২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম কমানো হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তাদের সিলেবাসেও আমরা কিছুটা পরিবর্তন আনব, আনতে হবে। কারণ গত বছরটা তারা সেভাবে তো পড়তে পারেনি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এসএসএসি ও এইচএসসি যারা দেবে ২০২১ সালে, তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আমরা তৈরি করেছি। …অত্যাবশ্যকীয় যে বিষয়গুলো সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এ সিলেবাস তৈরি করেছি।’
শিক্ষাবর্ষ যেন নষ্ট না হয়
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ঘাটতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতেও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের নানা দেশ এই অতিমারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, আবার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আমরা সে ঝুঁকিটা নিইনি।'
দীপু মনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীদের একেবারে পুরো একটা শিক্ষাবর্ষ যেন নষ্ট না হয়ে যায়। যেটুকু ঘাটতি হয়েছে তা যেন আমরা পূরণ করে দিতে পারি। কোনো ক্ষেত্রে একটা শিক্ষাবর্ষে পূরণ না হলে যেন পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে সেটা পূরণ করে দিতে আমরা চেষ্টা করব।’
আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা পাবে করোনা টিকা
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ধাপে করোনার টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবাসিক হলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এ কারণেই এই শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে চান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে গুচ্ছ পরীক্ষার পক্ষে সরকার
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা পরীক্ষা না নিয়ে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বানও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা যতদূর সম্ভব আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেব। যারা একেবারেই কোনো যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসতে চাইছে না, আমরা এখনো আশা করছি তারা আসবে।’
গুচ্ছ পদ্ধতির পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা একটা চরম হয়রানির মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের একটা ব্যাপক অর্থ ব্যয় হয়। সবার তো একই সামর্থ্য নেই। তৃতীয়ত এই যে অতিমারির একটি সময়ে এই লাখ লাখ শিক্ষার্থী গণপরিবহন ব্যবহার করে যাতায়াত করবে।
‘ছেলেরা অনেক সময় কোনো শহরে গিয়ে মসজিদে থেকেও পরীক্ষা দিতে পারে। মেয়েরা কিন্তু তাও পারে না। নিরাপত্তার নানা সমস্যা রয়েছে সেখানে।’