করোনা মহামারির ফেরে পড়ে গত বছরের মার্চে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ করা হয়, তখন স্নাতকোত্তর ও স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের অনেকের পরীক্ষা চলছিল। অনেকের ক্লাস শেষের দিকে হলেও পরীক্ষা কার্যক্রম তখনও শুরু হয়নি।
এক বছর পর যখন হল খুলছে, তখন সরকারি চাকরিতে ঢোকার বিসিএস পরীক্ষা কড়া নাড়ছে দরজায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকে বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষা আবেদন করতে পারছিলেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল মাস্টার্স ও অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য ১৩ মার্চ থেকে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছরের ১৮ মার্চ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সবশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ১৭ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে ১৮ মার্চ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তখন আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। ফলে শেষ পরীক্ষায় গিয়ে আটকে যায় ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবন।
হল খোলার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দীন বলেন, ‘আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ ঢাকা শহরে সবার আত্মীয় নেই। থাকলেও সেখানে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার মতো পরিবেশ থাকে না। হলে থাকলে রিডিংরুমে নিশ্চিন্তে অধ্যয়ন করা যায়। আবার কোনো কিছু না বুঝলে বন্ধুদের সহযোগিতা নেওয়া যায়। শুধু একটি পরীক্ষার কারণে আমরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় যখন হল বন্ধ করে, তখন মাস্টার্সের ক্লাস হয়েছিল মাত্র দুই মাস। পুরো সেমিস্টার তাদের কেটেছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা হয়নি। এই ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর হোসেন বলেন, ‘হল খুলে পরীক্ষাটা দ্রুত হয়ে গেলেই হয়। কারণ আমাদের চাকরির পড়া আর পরীক্ষা-ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন পরীক্ষাটা হলেই আমরা ভালোমতো চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারব।’
১৩ মার্চ থেকে হল খুললে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোন কোন বিভাগের পরীক্ষা আগে হবে তাদের তালিকা জমা দেয়া দেবে বিভাগগুলো। এছাড়া আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ণ দিবস অফিস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছৈ ।
ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনা না থাকলে গত বছরেই আমাদের গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু করোনার কারণে আমাদের কয়েকটি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় আমরা কোনো চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না।’
হাসনাতের মতোই এ সিদ্ধান্তকে ভালো বলছেন একই বর্ষের শিক্ষার্থী মনির উদ্দীন। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে ভালো। তাতে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব। তবে পরীক্ষার পরে আবার হল ছাড়তে হলে আমাদের পড়াশোনার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। সে কারণে আমাদের ব্যাচের দাবি, হল পুরোপুরি খুলে দেওয়া হোক। আমরা রিডিং রুমে পড়তে চাই।’
তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন এতে খুব বেশি সুফল দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছিল মূলত বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য। আগামী ৩১ মার্চ ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের শেষ তারিখ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষাই শুরু করবে হল খোলার দুই সপ্তাহ পর। সুতরাং তারা আবেদনের সে সুযোগ আর পাচ্ছে না। যদি হল খোলার কয়েকদিন পর থেকে পরীক্ষা নেয়া যেত, তাহলে “এপিয়ার্ড” দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারত।’