করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের ফল। ফলে শতভাগ শিক্ষার্থীই এবার পাস করেছেন। তবে এই ফলে খুশি হতে পারছেন না অনেক শিক্ষার্থীই।
অনেকেই এসএসসিতে মন মতো ফল না পেয়ে এইচএসসির জন্য কোমর বেঁধে নেমেছিলেন। কিন্তু আগের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন না হওয়ায় পিছিয়েই থেকে গেলেন।
আবার এতদিনের প্রস্তুতির পর পরীক্ষা দিতে না পারায় অনেকেই অখুশি।
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। শুরুতে তারিখ পেছানো হয় পরীক্ষার। পরে পরীক্ষাটি আর নেয়াই হয়নি।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে যুক্ত হয়ে ফল ঘোষণা করেন।
শিক্ষা কেন্দ্রে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল পাঠানো হয়নি। ফল প্রকাশ হয় অনলাইনে। আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমায়েত না হতে।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পাস করা সোহেল রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই অটো পাসে একদমই খুশি না। কারণ আমার এসএসসিতে খুব খারাপ ফলাফল হওয়ায় আমি এইচএসসিতে ভালো করার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। অটো পাস হওয়ার কারণে সেই পরিশ্রমটা কাজে লাগল না; বরং প্রমাণ হলো আমি কোনো পরিশ্রম করিনি।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই অটো পাসে আমার শিক্ষাজীবনের একটা ক্ষতি হয়ে গেল।’
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের এই পদ্ধতি যথাযথ হয়নি বলে মনে করেন এ শিক্ষার্থী।
হলিক্রস কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নোশিন হুমায়রা আশাতীতভাবে জিপিএ-৫ পেয়ে উল্লসিত। তবে কলেজে গিয়ে ফল উদযাপন করতে না পারায় মন খারাপ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যখন শুনেছি অটো পাস দেয়া হবে, তখন নাম্বার হিসাব করি আনুমানিক কত আসবে। আমার জেএসসি ও এসএসসিতে প্লাস ছিল না। হিসাব করে দেখলাম, স্বাভাবিকভাবেই ফোর পয়েন্ট সেভেন জিরোর কাছাকাছি পাব। এর জন্য আর তেমন উদ্বিগ্ন ছিলাম না। যেহেতু পরীক্ষা ছাড়া নাম্বার পাচ্ছি, টেনশনই কী করব?’
একই কলেজের মানবিক বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী লুৎফুন নাহার লতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এসএসসির রেজাল্ট ভালো ছিল না। তখন আমি সায়েন্সে ছিলাম; জিপিএ ছিল ৪.৬৭। তবে এবার আমার প্রস্তুতি ভালো ছিল। কিন্তু আগের রেজাল্টের ভিত্তিতে আমার রেজাল্ট এবারও হয়েছে জিপিএ ৪.৬৭।
‘তবে রেজাল্ট যেমনই হোক, আজকের দিনের জন্য হাজারটা স্বপ্ন বুনে রেখেছিলাম। ক্যাম্পাসে যখন দেখতাম বড় আপুরা তাদের রেজাল্ট উদযাপন করছে, তখন আমরাও এমন উদযাপনের অপেক্ষা করতাম। সে জন্য মন খারাপ লাগছে।’
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন রাশেদুল ইসলাম সাকিব। মোবাইল ফোনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি খুশি না। জানি এটা সর্বোচ্চ রেজাল্ট। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া তো নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারি না। পরীক্ষা দিয়ে যদি জিপিএ-৩ ও পেতাম তাও খুশি হতাম।’
বিএএফ শাহীন কলেজ কুর্মিটোলার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এসএসসিতে খুবই বাজে রেজাল্ট ছিল। ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। লেখাপড়ায় তেমন মনোযোগী ছিলাম না।
‘কিন্তু কলেজে এসে তো একটু নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেছিলাম। ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে, সেটাও মাথায় ছিল। প্রথম থেকেই ভালো প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। কিন্তু এএসসিতে খারাপ রেজাল্টের ভুলটাই কাল হলো। সেই ভুলটাই এখন বয়ে বেড়াতে হবে।’
ভিকারুননিসার সামনে দুপুর দেড়টার দিকে তিন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়। ফল জানতে চাইলে তাদের এক জন তাসফিয়া সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেজাল্ট ভালো আসেনি। জিপিএ ফোর পয়েন্ট নাইনএইট। পরীক্ষা দিয়ে হয়তো ফাইভ আসত। আবার না আসলেও মন খারাপ হতো না। কারণ আমার বর্তমান অবস্থা জাজ করা হয়েছে। কিন্তু দুই বছর আগে আমি কেমন ছিলাম, সে অনুযায়ী আমার বর্তমানকে আসলে তুলে ধরা যায় না।’
এ বিষয়ে ঢাকা কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএসসিতে ফলাফল যাদের খারাপ হয়, তারা অনেকেই এইচএসসিতে ভালো করতে চেষ্টা করে। তাদের এই অটো পাসে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এমন কেউ আজকে এখনও আমার কাছে আসেনি।’