চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নেপালের ১২ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন রংপুরের বেসরকারি নর্দান মেডিক্যাল কলেজে। অনুমোদন স্থগিত হয়ে গেলেও তা গোপন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রতিষ্ঠানটি। আর তাতেই চার বছর পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন খেয়েছে হোঁচট।
বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় ও নেপালের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও সমাধান পাচ্ছেন না নেপালি শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে গেল কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নেমেছেন। শুধু নেপালি শিক্ষার্থীরা নন, পাশাপাশি দেশেরও নয় শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, রংপুরের বেসরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন হয় ২০০১ সালে। সে বছরই শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। নিয়মিত তিন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও শর্ত পূরণ না করায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অনেক দেন দরবার করে ২০০৯ সালে আবারও শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পেলেও ২০১৫ সালে কঠোর হয় মন্ত্রণালয়। ফের কলেজটির কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। ততক্ষণে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে যায়।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে নামে। অব্যাহত আন্দোলন শুরু হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে যায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে।
কলেজটির সাবেক পরিচালক সেরাফুল ইসলাম হিমেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের দেয়া শর্ত পূরণ করে আমরা ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতে যাই। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেন। সেই থেকে আবার আমরা কার্যক্রম চালু করি।’
তিনি বলেন, ‘মামলা থাকায় গেল চার বছর বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কলেজে ভিজিটে আসেনি। ফলে ইন্টার্ন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।’
নেপালি শিক্ষার্থী রামেজ জেটাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নর্দান মেডিক্যাল কলেজে ২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তি হয়েছি। এখানে আমরা নিজ ইচ্ছায় আসিনি। সেই সময়ের অধ্যক্ষ আমাদের কনভিন্স করে এখানে নিয়ে আসেন।
‘আমরা তখন তাদের সব জিজ্ঞেস করি। সব ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, তাদের কলেজ অনেক নামীদামি। এখন এমবিবিএস পাশ করার এক বছর হয়ে গেল, ইন্টার্ন করতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে যারা অন্য মেডিক্যালে পড়েছে তাদের ইন্টার্ন শেষ হবার পথে।’
মেডিক্যাল কলেজটির পরিচালক রোকেয়া লাভলীর বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রোকেয়া লাভলী আমাদের বলে, এটা আমাদের বিজনেস, তোমাদের লাইফ নিয়ে কেন আমি সেন্টিমেন্ট হব। মানে তারা আমাদের কাছ থেকে শুধু টাকাই নিয়েছে, আমরা কিছুই পেলাম না।’
নেপালি আরেক শিক্ষার্থী পূজা চৌধুরী জানান, ‘আমাদের কাছে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট আছে। ওটা আমরা পাশ করছি। পরে ইন্টার্ন করার জন্য বিএমডিসি যে সার্টিফিকেট দেয় সে সার্টিফিকেট তো আমাদের নেই। আমাদের তো এক বছর লস হয়েছে।’
কলেজের অধ্যক্ষ বা মালিকপক্ষকে কিছু বললে তারা উল্টো শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দোষ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সঙ্গীত সাহা নামের আরেক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দশ মাস থেকে এখানে আছি। সবার সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি। কিন্তু কেউ কোনো সহায়তা করছে না। ঢাকায় অ্যাম্বাসিতেও গেছি, কিন্তু কেউই কিছু করছে না।’
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব মালিক পক্ষের, আমি চাকরি করি। তবুও আমরা কাগজপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়- অধিদপ্তরে যাচ্ছি সমাধানের জন্য।’
নর্দান মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. তাসকিনুর রহমানের একান্ত সহযোগী সেরাফুল হোসেন হিমেল জানান, মঙ্গলবার রাতে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেছিলেন। তাদের কথা শুনেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের কাছে এক মাসের সময় নিয়েছেন। এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।