বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত স্কুল বন্ধ: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:৩৪

সরকার প্রধান বলেন, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে কখন যে সারা বিশ্ব মুক্তি পাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা যখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্কুল খুলব তখনই আবার নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আসলো।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত স্কুল খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও এই সময়ে চালু থাকবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

বৃহস্পতিবার সকালে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে কখন যে সারা বিশ্ব মুক্তি পাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা যখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্কুল খুলব তখনই আবার নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আসলো।

‘কাজেই আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করেই আবার স্কুল খোলার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয় তাহলে খোলা হবে আর না হলে আমরা করব না। আমি মনে করি বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ।

পঞ্চম ধাপে ঘোষণা অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তা শেষ হওয়ার আগেই ১৮ ডিসেম্বর নতুন ঘোষণায় ছুটি বাড়িয়ে করা হয় ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত

করোনার সংকটে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘দুর্ভাগ্যের বিষয় স্কুলগুলো বন্ধ, কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সেটাও একই কারণে। আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন সংক্রমিত না হয় বা শিক্ষকরা সংক্রমিত না হয় বা অসুস্থ না হয়, করোনা ভাইরাস দ্বারা যেন আক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ ব্যবস্থাটা নেয়া হচ্ছে। তারপরও বইগুলো আমরা হাতে তুলে দিচ্ছি এই কারণে যাতে আমাদের পাঠ্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।’

বই বিতরণে সমাবেশ নয়

করোনাভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে সমাবেশ না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভাগে ভাগে নতুন বই বিতরণের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

বই বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক সঙ্গে যেন বেশি সমাবেশ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ভাগে ভাগে বইগুলো বিতরণ করাই ভালো। সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলুক এটাই আমরা চাই।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাও শুরু করেছি। আমরা শুধু প্রাথমিক পর্যায় না, একেবারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এই বই এবং বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিকে প্রায় ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫ বই বিনামূল্যে বিতরণের পদক্ষেপ নেয়া করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় দেয়া হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২২৮টি বই। মাধ্যমিক স্তরে দেয়া হচ্ছে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজা ৮৫৭টি বই।

শিক্ষার্থীরা যেন নতুন বইয়ের আনন্দ পায় সেজন্য প্রতিবছর বই উৎসব করা হয় বলেও জানান সরকার প্রধান।

‘নতুন বই পেলে ভালোও লাগে। মলাটটা লাগাবে, নামটা লিখবে সুন্দরভাবে, দেখবে-পড়বে সেটাই একটা আলাদা আনন্দ। সেই আনন্দটাই যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা পায় সেজন্যই আমরা প্রতি বছর ব্যবস্থা নেই।’

করোনার সময়ে শিক্ষার্থীদের ঘরবন্দি থাকার কষ্টটা বুঝতে পারছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। তার কারণ স্কুল ছাড়া ঘরে বসে থাকা অনেক কষ্টকর।

‘তারপরেও আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, আমার ঘরে আমার স্কুল। অর্থাৎ আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি তার বদৌলতে এখন ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হচ্ছে। তা ছাড়া সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে ছেলে মেয়েরা একেবারে শিক্ষা থেকে দূরে যাচ্ছে না।’

এ বছর প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট চার কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই।

ক্লাস না হলেও পড়াশোনা চালাতে হবে

করোনায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, করোনায় ক্লাস করা যাচ্ছে না, কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তাই ভর্তির ব্যবস্থাটাও নেয়া হচ্ছে।...আমরা চাই না আমাদের ছেলে মেয়েদের সময়টা নষ্ট হোক।’

দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বিরূপ প্রভাব যাতে শিক্ষার্থীদের মননে আঘাত না হানে সেজন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান সরকার প্রধান।

‘করোনার কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা অভিঘাত দেখা দিচ্ছে সেটা মোকাবিলারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

‘এ জন্য শীর্ষস্থানীয় সাইকোলোজিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কিভাবে আমাদের ছেলে মেয়েদের সহায়তা দেয়া যায়, কাউন্সিলিং করা যায় তার ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি।’

শুধু পাঠ্যবই নয়

করোনায় ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ারও তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, আমি জানি ঘরে বসে থাকা অনেক কষ্টের। তারপরেও শুধু পাঠ্যবই নয়, এখন অনেক বই আছে যেগুলো পড়া যায়, পড়ার জন্য আমি অনুরোধ করব। সেই সঙ্গে একটু খেলাধুলাও করতে হবে।

‘যারা বাবা মা তাদের একটু অনুরোধ করব আপনারা বাচ্চাদের একটু সময় দেবেন। কারণ করোনা ভাইরাস আমাদের যেমন কষ্ট দিচ্ছে, আবার হাজার কাজের চাপেও ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এই সুযোগটার আপনারা সদ্‌ব্যবহার করবেন।

‘ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় কাটাবেন বা তাদেরকে একটু ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ যেন হয় অর্থাৎ খেলাধুলা সেগুলোও যেন করতে পারে, সে ব্যবস্থাটা নিতে হবে যাতে করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যটা ভালো থাকে। এটা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

মাস্ক পরুন

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার এবং মাস্ক পরার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমি অনুরোধ করব, যেখানেই জনসমাগম বেশি বা মানুষ বেশি বা মানুষের সঙ্গে মিশতে গেলে তখন মাস্ক পরে থাকতে হবে।

‘কারণ এসব সুরক্ষা দেয় আমাদের। মাস্কটা পরা, হাত সাবান দিয়ে ধুয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা করোনা থেকে আমাদের সুরক্ষা দেবে।’

পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন যেমন শীতকাল বিভিন্ন ধরনের লেবু আছে কমলালেবুসহ এগুলো খাওয়া, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর