সরকারের অনুমোদন না নিয়েই নীলফামারীর সৈয়দপুরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু উপাধি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই বিষয়ে সতর্ক করেছে। বলা হয়েছে, সেখানে কেউ যেন ভর্তি না হয়, আর চাকরির প্রলোভনে যেন না পড়ে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা-ইউজিসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অবৈধ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকারের অনুমতি দরকার হয়। সেই অনুমতি না নিয়েই নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলতি বছর কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম এসেছে এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহের। তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দাবি করছেন।
এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহের বিস্তারিত পরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। ইউজিসিও এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।
তার নামেই পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এসেছে। এতে বাংলা, ইংরেজি, আইন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, গণিত, পরিসংখ্যান, পদার্থ, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, হিসাববিজ্ঞান, বিবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে একজন করে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক এবং দুই জন করে প্রভাষক নিয়োগের কথা জানানো হয়।
এর বাইরে উপ উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, উপ রেজিস্ট্রার, লাইব্রেরিয়ান, কম্পিউটার অপারেটরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগের আবেদন চাওয়া হয়। আগ্রহীদেরকে সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০০ টাকা করে অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফটসহ আবেদন করার কথা জানানো হয়।
একটি দৈনিকে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ইউজিসি জানতে পারে অনুমোদনহীন বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালের ২০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকের বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও এই দাবি অসত্য।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত ৩২৩ নারী আসন) রাবেয়া আলীমকে।
রাবেয়া আলীম তার নাম ব্যবহারের বিষয়টি জানেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এর আগে সৈয়দপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সংবাদ এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর বিষয়টি জানতে পেরে তদন্তে নামে ইউজিসি।
সংস্থাটির ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ জানান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে কমিশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবও তাদের কাছে পাঠানো হয়নি।
এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও চাকরি প্রত্যাশীদেরকে সর্তক হওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
জানানো হয়েছে, ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ও প্রোগাম দেয়া আছে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানোর বৈধতা নেই।
ইউজিসি জানিয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপ্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে নিয়োগ দিলে তা হবে সম্পূর্ণ আইনবিরোধী।
উপাচার্যবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো সদনও অবৈধ হবে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ফখরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) দৈনিক করতোয়া পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এরপরে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসককে (নীলফামারীর) জানানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা হিসেব নাম আসা এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহের পরিচয় কী- জানতে চাইলে ইউজিসি কর্মকর্তা বলেন, ‘ওনি কে আমরা জানি না। প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা খুঁজে বের করবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা
ইউজিসির পর এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানিয়েছেন, কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিয়োগের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে কোনো রকমের লেনদেন বা আবেদন না করতে সতর্ক করে দিয়ে তিনি জানান, বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।