পুরান ঢাকার ক্যাম্পাসে স্থান সংকুলান হচ্ছে না বলে নতুন ক্যাম্পাস পাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে থাকবে আবাসিক হল, পর্যাপ্ত খোলা জায়গাসহ অ্যাকাডেমিক ভবন।
কিন্তু নতুন ক্যাম্পাসে যাবে কবে?
যেখানে নতুন ক্যাম্পাস হবে ঠিক হয়েছে, সেটির মাটি ভরাটের কাজই এখনও শেষ হয়নি। বর্ষা শেষ হলেও পানি থৈ থৈ করছে। প্রাচীর নেই, সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে খুঁটি দিয়ে।
আবাসন সংকট কাটাতে বেদখল হল উদ্ধারের দাবিতে তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জগন্নাথের নতুন ক্যাম্পাস অনুমোদন হয় মন্ত্রিসভায়।
সে সময় জানানো হয়, ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আছে প্রকল্পের মেয়াদ।
সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তিন সপ্তাহ আগেই। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম খান এখন বলছেন, আগামী জুলাই পর্যন্ত সময় আছে।
তবে এই সময় পুরো ক্যাম্পাস তৈরির সময় না। উপাচার্য মীজানুর রহমান বলছেন, যারা ক্যাম্পাসটা তৈরি করবে, তাদের থাকার জন্য ভবন নির্মাণ করা হবে প্রথমে। গোটা ক্যাম্পাস নির্মাণ শেষ হবে কবে, সেটি এখনই বলা সম্ভব নয়।
উপাচার্য এও বলছেন, পুরো কাজ শেষ করতে আরও আট থেকে ১০ বছর লাগবে। সে জন্য যত টাকা লাগবে, তারই সংস্থান হয়নি এখনও।
ক্যাম্পাসটি নির্মিত হবে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় প্রায় ২০০ একর ভূমির উপর। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে এ জায়গার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়।
প্রকল্প পরিচালক সেলিম খানের দাবি, ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রায় অর্ধেক কাজ কীভাবে শেষ হলো, সেটা বোঝা দায়।
যে জমির ওপর ক্যাম্পাস নির্মিত হবে, সেই জায়গাটা এখনও পানির নিচে। স্থানীয় কয়েকজনকে জাল ফেলে মাছ ধরতেও দেখা গেল।
২০১৮ সালে জমি অধিগ্রহণের পর খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজই হয়নি। ছবি: নিউজবাংলা
২০১৮ সালে জমি অধিগ্রহণের পর খুঁটি দিয়ে জমির সীমানা নির্ধারণ করার পর থেকে দৃশ্যমান কোনো কাজই করা হয়নি।
যাদের জমি নেয়া হয়েছে, তাদের একজন আবুল হোসেন মিয়া। তার অভিযোগ, এখনও সবাই ক্ষতিপূরণের টাকাই পাননি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুইশ একর জমির ২৫ শতাংশ মালিক এখনও জমির দাম পান নাই। শুনেছি কাগজের জটিলতার কারণে মূল্য পরিশোধে দেরি হচ্ছে।’
আরেক জমি মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই যাবত কোনো দিন জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাইনবোর্ড দেখি নাই। শুধু লাল রঙের খুঁটি গেড়ে সীমানা নির্ধারণ করসে।’
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জমি বুঝে পেয়েছি। সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকার ধীরে ধীরে টাকা দেবে, ধীরে ধীরে কাজ হবে।’
তিনি আরও বলেন, কাজ শুরু করতে হলে ডিজাইনার নিয়োগ দিতে হবে। এখনও ডিজাইনার কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় অধীগ্রহণ করা জমির ভরাট কাজই এখনও শেষ হয়নি। ছবি: নিউজবাংলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ‘যে প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তা ভবন নির্মাণের না। এটা জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তা, ব্রিজ, কালভাট নির্মাণ ও পানির ব্যবস্থা করার। মাটি ভরাট করলেই অন্যান্য কাজ করবে।’
উপাচার্য বলছেন, ‘দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেবে সরকার। নিয়োগ হলে তারপর তিনি মাস্টার প্ল্যান করবেন। নির্মাণ হবে এক কোটি স্কয়ার ফুটের ভবন।’
জমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক কাজগুলো করতে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য জানান, পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস করতে লাগবে ১০ হাজার কোটি টাকা।
এত সময় লাগবে শুনে হতাশ ছাত্ররা। চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র বলেন, ‘সব কিছুর মূলে হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি। যদি ইচ্ছা শক্তিই না থাকে সে ক্ষেত্রে ভালো কিছুই করা সম্ভব না। ওনাদের সমন্বয়েরও অভাব আছে। তারা এখনও বিলটাই ভরাট করেননি। তারা শুধু আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েই যাচ্ছেন, বাস্তবায়নের কোনো নমুনা দেখছি না।’
মাস্টার্স পড়ুয়া আরেক জন ছাত্র বলেন, ‘আমাদের ভিসি তার আট বছর সময়ে মেয়েদের একটা হল ছাড়া তেমন কিছুই করেননি। ২০১২ সালের দিকে এই হল তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে এই কাজ স্থগিত থাকলে, ছাত্রদের প্রেশারে হলের কাজ শেষ হয়। চার বছরেও ক্যাম্পাসের কাজ এতটুকু না আগালে কী আর বলব?’