বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষায় নতুন বৈষম্য অ্যাসাইনমেন্টে

  •    
  • ৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৩০

নিম্নবিত্ত বা গ্রামের শিক্ষার্থীদের কাছে এখনও পৌঁছেনি অ্যাসাইনমেন্ট। নম্বর বা পাস ফেলের সম্পর্ক নেই বলে বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।

স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করা যায়, এমন পাঠ্যক্রম প্রকাশের পর পাঁচ দিন চলে গেলেও তা পৌঁছেনি বহু শিক্ষার্থীর কাছে।

অথচ সাত দিনে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা পড়ার কথা স্কুলে। কিন্তু অনলাইনে দেয়া অ্যাসাইনমেন্টগুলো কীভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হবে, সে বিষয়ে বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষকরাই।

এই অ্যাসাইনমেন্টের সঙ্গে পাস ফেল বা নম্বরের সম্পর্ক নেই। আর এ কারণেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই।

করোনাকালে অনলাইনে পড়ালেখা যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না। ফলে তারা পড়ালেখার বাইরে রয়ে গেছে। এখন অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিও একই ধরনের সমস্যা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।কিন্তু করোনাকালে অর্ধেক শিক্ষার্থী যেখানে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি, সেখানে এই সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি তারা শেষ করবে কী করে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর--মাউশির তথ্য বলছে, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর। ওয়েবসাইটে পাঠ্যক্রমটি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেটি এখনও বহু শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছেনি।

রাজধানীর বাড্ডার আলতাফুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তিনটি শাখায় পড়াশোনা করছে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী। তাদের কেউই এখনও সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি পায়নি। অভিভাবকদের এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ ফজলুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের বাবা মা তেমন সচেতন নন। যে কারণে আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি পাঠানো হবে।’

‘এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। পাঠ্যসূচি ফটোকপি করে শিক্ষকদের কাছে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বাচ্চাদের অভিভাবককে ফোন করে প্রতিষ্ঠানে ডেকে এনে দিয়ে দেবে’-বলেন অধ্যক্ষ।

এরই মধ্যে পাঁচ দিন তো চলে গেল। এত বিলম্ব কেন?- এমন প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ফটোকপি ও মিটিং করতে একটু সময় লেগে গেছে। আজকালের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি পেয়ে যাবে। একটি অ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে তারা দুইদিন সময় পাবে। এরপর আবার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে।’

গ্রামের শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও নাজুক।

 

ঝিনাইদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান সবুজ, স্কুল বন্ধ হয়ার পর থেকে বই খুলে দেখেনি।

সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি সর্ম্পকে জানতে চাইলে সে বলে, ‘বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি দিয়ে কী হবে? আর মূল্যায়নই বা কী কাজে লাগবে? সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি স্কুল থেকে কিছু বলেনি।’

শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানের ভাই লিটন সরকার বলেন, ‘স্কুল থেকে কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। আর এ বিষয়ে আমি জানি না। আমাদের আশেপাশে যারা বসবাস করে এমন শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানে না।’

ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিয়ার রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এটি অনলাইনে পাঠিয়েছে। গ্রামের মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার মধ্যে সক্ষমতা নেই। আমরা ফটোকপির ব্যবস্থা রেখেছি। প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা এটা তাদের কাছে সরবরাহ করব।’

শিক্ষার্থীরা কি এটা নিয়ে জানে বা এ নিয়ে আগ্রহ আছে?- এমন প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’

রাজধানীর বন্ধ থাকা কদমতলী এলাকার রেঁনেসা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক শিক্ষার্থী

 

বরিশালের এ আর এস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানেন না তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রম পেয়েছে কি না। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নেয়া হয়নি। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিলে বোঝা যাবে কারা অ্যাসাইনমেন্টের বাইরে রয়েছে।’

যারা বাদ পড়বে তারা পিছিয়ে পড়বে কি না এমন প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, ‘করোনা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাজেহাল করে তুলেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অনেকেই এমন পিছিয়ে পড়বে।’

একই জেলার শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘ফেসবুকের একটি গ্রুপে পাঠ্যক্রম দেয়া হয়েছে।’ তবে স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কবির হোসাইন পাঠ্যসূচি পায়নি। এ বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এ নিয়ে তার তেমন আগ্রহও নেই।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এ বিষয়ে ওয়েবসাইটে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে অ্যাসাইনমেন্ট কীভাবে পৌঁছাবে সে বিষয়েও বলা হয়েছে। দুই একটি অ্যাসাইমেন্ট জমা পড়ার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।’

অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। অ্যাসাইনমেন্টে তারা অংশ নিতে পারবে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের কাছে আমরা কীভাবে অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছাতে পারি সেই বিষয়েও নিদের্শনা দেয়া আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট নেয়ার সুযোগ থাকবে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সাত মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাসের বাইরে। গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী সংসদ টিভিতে ক্লাস হলেও নিয়মিত যোগদান করেনি। এখন যে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি এর যথাযথ বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায় এ বিষয়ে এখুনি ভাবা উচিত।’

‘করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা বাইরে। তাদেরকে টেবিলে ফিরিয়ে আনার এটি একটা মাধ্যম হতে পারে।’

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে সব পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের অটো পাস করানো হচ্ছে। পড়াশোনা যা কিছু চলছে অনলাইনে। তবে এটি শিক্ষায় নতুন বৈষম্য তৈরি করেছে। নিম্ন আয়ের বা গ্রাম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে অনলাইনে ক্লাসের বাইরে বহু শিশু। একাধিক জরিপে দেখা গেছে, ক্লাসের বাইরে শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এই পাঠক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের শিখন যোগ্যতা অর্জনের জন্য। এর মূল্যায়নে কোনো নম্বর বা পাস ফেল নেই। শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণ এবং কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা হবে এই পাঠক্রমের মাধ্যমে। তবে শিক্ষকদের মধ্যেও ধারণার অভাব রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর