বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্ধ হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন, শিশুরা ভর্তি হবে কোথায়

  •    
  • ৫ নভেম্বর, ২০২০ ১০:২০

করোনার কারণে সংকটে পড়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শহর এলাকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। এ কারণে আগামী শিক্ষাবর্ষে স্কুল খুঁজে পেতেই সমস্যায় পড়তে পারেন অভিভাবকরা।

রাজধানীর বাগিচারটেক রামপুরা ইকরা আইডিয়াল স্কুল। সাত মাস আগে আসবাবপত্র বেচে বাড়ি চলে গেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক। ফলে স্কুল খোলায় নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বিপাকে পড়বে দুই শতাধিক ছাত্র।

ওই এলাকার আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিটি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী ১৫০ জন। ইকরা আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের এখানে অথবা অন্য কোথাও ভর্তি হতে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্কুল সাড়ে তিনশ ছাত্র ধারণ করতে পারবে কি না। একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে চারটি কক্ষ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি।

সিটি আইডিয়ালের প্রধান শিক্ষক মাহবুব হোসেন যা বলেছেন, তাতে ইকরা আইডিয়ালের কোনো শিশু এখানে ভর্তি হতে পারবে কি না তার চেয়ে বড় প্রশ্ন এই স্কুলের শিশুদেরই অন্য স্কুল খুঁজতে হবে কি না।

এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের টিউশন ফি দেয়নি শিক্ষার্থীরা। এভাবে চললে আর কখনও খোলা সম্ভব হবে না।’

এই দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাহলে কোথায় যাবে?

ইকরার কেজি শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তারের মা সাবিনা বেগম বলেন, ‘বাবা চাকরি করেন। সময় দিতে পারেন না মেয়েকে। নিজের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বাসার কাছের স্কুলে ভর্তি করাই। এটা বন্ধ হয়ে গেছে শুনেছি। তাহলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে।’

খিলগাঁওয়ের শান্তিরবাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর ঢাকা ক্যাডেট স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে পুরোপুরি। স্কুলের জায়গায় ভাড়ায় উঠেছে একটি পরিবার।

রাজধানীর মধ্যবাড্ডার এই কিন্ডারগার্টেনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলের ভবনটি ভাড়া নিয়ে থাকছে একটি পরিবার।

 

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে চলে গেছেন গ্রামে। গ্রামের বাজারে ফটোকপির মেশিন বসিয়ে সেখানকার আয়ে চলছে সংসার।

শিক্ষার্থীরা কী করবে?- এমন প্রশ্নে সাইদুল বলেন, ‘নতুন স্কুল চালু করতে হবে, নইলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে।’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী নলেজ হেভেন আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইফতির মা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় আট মাস স্কুল বন্ধ। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে বাসায় শিক্ষক রেখেছি। তবে চিন্তার বিষয়, মেয়ের স্কুল করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যদি এই স্কুল না খোলে তাহলে জানুয়ারিতে অন্য কোথাও ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু কোথায়?’

বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ব্রিটেন স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জোবায়েরের মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘করোনার মধ্যে ছেলে পড়াশোনা করে না। এ নিয়ে চিন্তা তো রয়েছেই। তবে স্কুল বন্ধ হওয়ায় ছেলেকে নতুন কোথাও ভর্তি করাতে হবে। এখন তো এটাই বড় সমস্যা। যেদিকে খোঁজ নেই, সব জায়গায় বলে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।’

মেরুল বাড্ডা জামে মসজিদের পাশে এই স্কুল বন্ধ করে সেখানে সংগীত ও কারাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই চিত্র রাজধানীর অলিগলিতে। শহরে শিশুদের পড়াশোনা হয় সিংহভাগই বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে। কিছু সরকারি স্কুল আছে বটে, তাতে নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান ছাড়া কেউ পড়ে না বললেই চলে। আর সেগুলোতে যে পরিবেশ, তাতে সব অভিভাবক তাদের সন্তানদের পাঠাতে চাইবেন কি না এ নিয়ে আছে প্রশ্ন।

যে কারণে এই সমস্যা

গত মার্চ থেকে বন্ধ থাকা স্কুলের বেতন ভাতা দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। তাদের যুক্তি, পড়াশোনা না হলে কেন টাকা দেবেন।

তবে এটি স্কুলের জন্য বয়ে এনেছে বিপত্তি। তাদের আর কোনো উপার্জন নেই। সরকার থেকে এই ধরনের স্কুলের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় না। আর বেতন না পেয়ে খরচের সক্ষমতা হারিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে বহু স্কুল।

করোনার কারণে চলতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। আগামী শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে আরও কয়েক মাস বন্ধ থাকলে বিপুল পরিমাণ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কিত স্কুল মালিকদের সংগঠন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, দেশে ৭০ হাজার কিন্ডারগার্টেন রয়েছে, যাতে ৯০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে না খুললে হয়ত ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, অভিভাবকরা টাকা দিচ্ছে না। স্কুলগুলো বাড়িভাড়াই দিতে পারছে না।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল হোসেন সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। অভিভাবকরা চাইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারেন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি নেয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।’

তবে শহর অঞ্চলের অভিভাবকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী কি না, আর পর্যাপ্ত স্কুল আছে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন সংকট দেখা দেবে। অনেকেই পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে ভর্তি করাতে পারবে না। বাধ্য হয়ে কেউ তাদের সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবে। কিন্তু ঢাকার মতো বড় শহরে তো এত স্কুল নেই। এরা কোথায় পড়বে?’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘করোনা শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সংকট তৈরি করেছে। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শিক্ষার বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সারাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন কোটির কিছু বেশি। এদের মধ্যে সরকারি স্কুলে পড়ে দুই কোটির কাছাকাছি। এদের সিংহভাগই মফস্বল ও গ্রাম এলাকার।

এ বিভাগের আরো খবর