বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা: শিক্ষক থেকে মুদি দোকানি, মসলা বিক্রেতা

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ১৩:০১

৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর আয় নেই সাত মাস। তাদের কেউ হয়েছেন দোকানি, ফেরিওয়ালা, কৃষক। একই পরিস্থিতি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের।

করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর ‘মুগদা আদর্শ বিদ্যালয়’-এর একটি কক্ষ এখন মুদি দোকান। চাল, ডাল, তেল, লবণ থেকে শুরু করে মুখরোচক খাবার বিক্রি করে আয় করেন মারুফ হোসেন। তবে তিনি খুবই ‘দুঃখিত’।

কারণ?

কিন্ডারগার্টেন স্কুলটির মালিক ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন মারুফ। করোনাকাল তাকে শিক্ষক থেকে বানিয়ে দিয়েছে মুদির দোকানি।

১১ বছর শিক্ষকতা করেছেন মারুফ। মানুষ সম্মান দিত। এখন যে কাজটা করেন, সেটাকে ছোট মনে করেন না। কারণ, তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এর আয়। তবু মনের কোণে দুঃখ।

শিক্ষকতা তার ঘটনাচক্রে না, আবেগ থেকে নেয়া পেশা। এ জন্য বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের ‘উচ্চ বেতনের’ চাকরিও ছেড়েছিলেন।

সেটি ২০০৯ সালের কথা। শিশুদের পড়াতে ভালো লাগে, তাই ব্যাংকার পরিচয় ঘুঁচিয়ে চালু করেন স্কুল। কিন্ডারগার্টেনটি তার আবেগের পাশাপাশি আয়েরও একমাত্র উৎস হয়ে উঠে।

 

ভালোই চলছিল। তবে করোনার আঘাতে ঘটে ছন্দপতন। গত মার্চে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল। আয় বন্ধ, সঞ্চয়ও শেষ। ঘর ভাড়া বাকি পড়ে সাত মাস।

শিক্ষক মানুষ, হাত পাততে পারেন না। কিন্তু সংসার চলে না, কী করবেন ভেবে নিজের স্কুলের একটি কক্ষ ভেঙে সেখানে তোলেন চাল, ডাল, তেল, নুন।

বাচ্চারা বই খাতা নিয়ে আসে না, খাবার কিনতে তো আসবে। তাতে অন্তত মিটবে চোখের তৃষ্ণা।

মারুফ হোসেন নিজের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কষ্ট হয় ভাই। জমানো টাকা তিন মাসে শেষ। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি ভাড়া দিয়েছি। স্কুলের ভাড়া দিয়েছি। নিরুপায় হয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে দোকানটা দিলাম।’

এমনই গল্প সুরভী সুলতানার। তিনিও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ১০ বছর পড়িয়েছেন মুগদারই ‘স্বরলিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে’।

করোনা মহামারি শিক্ষিকার পরিচয় ঘুঁচিয়ে তাকে মশলা বিক্রেতা বানিয়েছে।

স্কুল বন্ধ হওয়ায় আয় বন্ধ হওয়া ১০টি স্কুলের শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন একটি অনলাইন শপ। ফেইসবুকে ‘মাস্টার গ্রুপ’ নামে পেজ খুলে পণ্য বিক্রি করে কোনো রকমে চলছেন তারা।

এই পেজে হলুদ, মরিচ, জিরা, সরিষার তেল, কালোজিরা, ধনিয়ার মতো নিত্যপণ্য বিক্রি হয়।

সুরভী নিউজবাংলাকে জানান, তার স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৩০ জন। তাদের কেউ এখন কোথাও অল্প বেতনের চাকরি করছেন। কেউ বা অনলাইনে কাপড় বিক্রি করছেন।

করোনা মহামারি যাদেরকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছে তাদের মধ্যে অন্যতম বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমনিতেই এদের বেতন কম। আয় হতো মূলত প্রাইভেট পড়িয়ে। তবে স্কুল বন্ধ বলে অভিভাবকরা শিক্ষক রাখার তাগিদও অনুভব করছেন না।

এই অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার স্কুলের ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের জন্য বিশেষ কোনো সহায়তার প্রকল্পও নেই।

একই অবস্থায় দিন কাটছে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের। সরকারি হিসাবে সারাদেশে চার হাজার ৩১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১ হাজার শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারি কোনো অনুদান না পাওয়া এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পরিস্থিতিও কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকদের মতো।

বাসা ভাড়া দিতে না পেরে স্কুলের আসবাবপত্র, এমনকি স্কুল বিক্রির বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি ফেসবুকে।

রাজধানীর উত্তর মুগদাপাড়া ন্যাশনাল মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাত মাস শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দিতে পারিনি। অনেক শিক্ষক ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। যারা রয়েছেন, তারা নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।’

‘ছাত্রদের বেতন বন্ধ, বাসাভাড়া দেয়া হয়নি। বাড়িওলারা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। এখন কী করব জানি না। স্কুল বন্ধ করে দিলে ছাত্র-ছাত্রীদেরেই কী হবে? তারা কোথায় গিয়ে ভর্তি হবে?’- দুশ্চিন্তায় জাহিদুল।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার উভয় সংকটে আছি। একদিকে বাড়ি ভাড়ার চাপ অন্যদিকে শিক্ষকদের মানবেতর জীবন। বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ক্যাডেট স্কুলের মালিক আসবাবপত্র বিক্রি করে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।’

সরকারের সহযোগিতা না পেলে ৭০ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এই শিক্ষক নেতা।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। টিউশনি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এখন তাদের কেউ সবজি বিক্রতা, কেউ কৃষি, কেউ ফেরিওয়ারা হয়েছেন।

‘কেউ কেউ মাঝে মাঝে ফোন করে কান্নাকাটি করেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিপাকে। সারাদেশে ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন কমে গেছে।

কিছু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া বাকিগুলোর বেতন অনিয়মিত হয়ে গেছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে। কিন্তু করোনার কারণে সেই ফি এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে তারা বেতন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর