ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ১৩ অক্টোবর তাদের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ‘নরম্যান বোরলগ অ্যাওয়ার্ড ফর ফিল্ড রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন’-এর বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের তরুণ ভেটেরিনারিয়ান ডা. সালমা সুলতানার নাম ঘোষণা করে।
দেশে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে সালমা শুরু করেন তার স্বপ্নের প্রকল্প মডেল লাইভস্টক ইনস্টিটিউট ঢাকা।
মাঠ পর্যায়ে প্রাণিচিকিৎসায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে তার এ ইনস্টিটিউটে ১৪ মাস মেয়াদি 'এনিমেল হেলথ অ্যান্ড প্রডাকশন' ও 'পোলট্রি ফার্মিং' কোর্স করানো হয়।
এ ছাড়া খামারিদের সচেতন করতে কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি প্রাণী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালও চালিয়ে আসছে মডেল লাইভস্টক।
১৯৮৬ সালে নোবেলজয়ী নরম্যান বোরলগ ‘বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৪ সালে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ২০১৫ সালে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ এই সম্মাননা পেয়েছিলেন।
সালমা ২০১২ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে স্নাতক শেষ করে ভারতের তামিলনাড়ুতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন সালমা সুলতানা।
এরপর দেশে নিজের পুরোনো শিক্ষায়তনে ফিরে ২০১৪ সালে ফার্মাকোলজিতে মাস্টার্স করেন।
সহকর্মীদের সঙ্গে ডা. সালমা সুলতানা
স্নাতক শেষ করে পত্রিকায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে তিনি কমিউনিটি বেইজড ডেইরি ভেটেরিনারি ফাউন্ডেশনে ভেটেরিনারি অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তখনই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করেন।
পরবর্তীতে সালমা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইনস্টিটিউটের অনুমোদনের জন্য। একসময় পেয়ে যান অনুমোদন।
তবে হাতে নেই টাকা। চাকরিজীবী বাবা তার কাঁধে হাত রাখলেন। নিজের জমানো টাকা দিয়ে দিলেন মেয়েকে। সেই টাকায় ঢাকার ডেমরায় গড়ে ওঠে স্বপ্নের মডেল লাইভস্টক ইনস্টিটিউট।
মডেল লাইভস্টক ইনস্টিটিউট দেশের প্রথম প্রাণিসম্পদ বিষয়ক ইনস্টিটিউট। যেটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ইন এনিমেল হেলথ অ্যান্ড প্রডাকশন এবং সার্টিফিকেট ইন পোলট্রি ফার্মিংয়ের ওপর ডিগ্রি দিয়ে থাকে।
সালমা বলেন, 'এই পুরস্কার অনেক সম্মানের। একসময় মানুষ ভেটেরিনারিয়ানদের সম্মানের চোখে দেখতো না। সেই দিন বদলেছে এখন। আমি আমার এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে চাই।'
তার এই অর্জন দেশে আরো অনেক সুলতানার জন্ম দেবে। তারা নিশ্চয়ই এগিয়েও যাবে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি!