বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৩ শতাংশ পোশাক শ্রমিক এখনো বর্ধিত মজুরি পুরোপুরি পাননি: গবেষণা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১৬:২২

দেশের তৈরি পোশাক খাতে সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, শ্রমিকদের প্রায় ১৩ শতাংশ এখনো বর্ধিত মজুরি সম্পূর্ণভাবে পাচ্ছেন না। তাদের কেউ আংশিকভাবে বাড়তি মজুরি পেয়েছেন, আবার কেউ একেবারেই পাননি।গবেষণাটি ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি হয়। এতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার ৬০টি পোশাক কারখানার ২৪০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ‘ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন: বাস্তব অবস্থা ও শ্রমিকদের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। মন্ডিয়াল এফএনভির সহায়তায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আওয়াজ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার।সরকার ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের প্রবেশ পর্যায়ের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, জরিপে দেখা গেছে—প্রায় ৮৭ শতাংশ শ্রমিক নতুন কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ বর্ধিত মজুরি পাচ্ছেন। বাকি ১৩ শতাংশের মধ্যে ৮ শতাংশ আংশিকভাবে এবং ৫ শতাংশ এখনো সংশোধিত গ্রেড অনুযায়ী মজুরি পাননি।তিনি আরও জানান, জরিপে অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে নিট, ওভেন ও কম্পোজিট ইউনিট ছিল, যা খাতটির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে।অনুষ্ঠানে সাবেক শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সামাদ আল আজাদ এবং সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এ কে এম নাসিমসহ অনেকে বক্তব্য দেন।অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, যেসব কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠন আছে, সেখানে বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকরের পর ৩১ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত কাজের (ওভারটাইম) বেতন ১ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত দেরিতে পেয়েছেন। ৫২ শতাংশ শ্রমিক কাজের চাপ ও উৎপাদন টার্গেট বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ২২ শতাংশ চাকরির অনিশ্চয়তা, ১৪ শতাংশ অনিয়মিত বেতন এবং ১১ শতাংশ গ্রেড নির্ধারণ ও পদোন্নতি নিয়ে বিভ্রান্তির কথা জানিয়েছেন।জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ শতাংশ শ্রমিক ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক জানিয়েছেন এটি কার্যকর হয়েছে, তবে ১৩ শতাংশ এখনো ইনক্রিমেন্ট পাননি।বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, গবেষণায় যেসব কারখানায় অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কি না- তা স্পষ্ট নয়। তার দাবি, রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকরা মাস শেষে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন।তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতি পাঁচ বছর পর বড় মজুরি বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিবছর মজুরি পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে শ্রমিক আন্দোলন ও উৎপাদনে বিঘ্ন না ঘটে।বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোনো সদস্য কারখানা বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়নি। কিছু কারখানা হয়তো আংশিকভাবে মজুরি দিয়েছে। তবে যেসব কারখানা সদস্যভুক্ত নয়, সেগুলোর তদারকি সরকারের দায়িত্ব বলে তিনি উল্লেখ করেন।আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথন বলেন, সময়মতো ও পূর্ণ বেতন প্রদান শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার। এটি না হলে শুধু শ্রমিক নয়, দেশের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তিনি জোর দিয়ে বলেন, অনিয়ম রোধে পরিদর্শন ও তদারকি জোরদার করতে হবে, ফলাফল প্রকাশ করতে হবে এবং নিয়মিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও দায়িত্বশীল ক্রয়নীতি অনুসরণ করা জরুরি।ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, মজুরি গেজেটে পরিষ্কার নির্দেশনার অভাবে অনেক মালিক ইচ্ছামতো গ্রেড নির্ধারণ করছেন, ফলে শ্রমিকরা বৈধ বেতন বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বড় কারখানাগুলো আরও প্রসারিত হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক উৎপাদন ও রপ্তানি আয় দুই-ই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর