২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ৯৬, ৪ দশমিক ৪৮ ও ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮৭, ৪ দশমিক ৪৭ ও ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। চার প্রান্তিকের গড় হিসেবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে।
চলতি মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪০১ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ১৭৭ বিলিয়ন টাকা।
খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কৃষি খাতের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ০ দশমিক ৭৬, ১ দশমিক ২৫ ও ২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে শিল্প খাত তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১ দশমিক ০৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৪, ৭ দশমিক ১০ ও ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৪১, ৩ দশমিক ৭৮ ও ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সামগ্রিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বেশ কম।
তিনি বলেন, ‘বার্ষিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক অনুমান ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেটিতে পৌঁছানো এখন আর সম্ভব নয় বলে মনে হচ্ছে।’
ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এটি হবে কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, যদিও ২০২০ সালের মহামারির সময়কার প্রবৃদ্ধির তুলনায় কিছুটা ভালো।’ তিনি অর্থবছর ২০২৪–২৫-কে অর্থনীতির জন্য ‘বিপর্যয়কর বছর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।