প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা ইপিজেড। ২০২৪- ২৫ অর্থবছরে এখান থেকে ৯০২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে কুমিল্লা ইপিজেডের এই সম্ভাবনাকে আরো বড় করে দেখছে বেপজা কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ( বেপজা) জানায়, কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্লট খালি না থাকায় নতুন বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলে বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, রপ্তানি আয়ও বাড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার লক্ষ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নির্মিত ২৬৭ একরের কুমিল্লা ইপিজেডে মোট প্লট সংখ্যা ২৪৩টি।
বেপজা কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বাসসকে বলেন, প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা ইপিজেড। ৯০২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। ৪৬টি প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে যা স্থানীয় অর্থনীতিকে করেছে গতিশীল। প্লট খালি না থাকায় নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুযোগ নেই। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর হতেই হাজার হাজার শ্রমিকের ব্যস্ত পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কুমিল্লা ইপিজেড। যন্ত্রের শব্দ যোগ করছে শিল্প আর রপ্তানির নতুন সব গল্প। নিজেই ভাঙছে নিজের রেকর্ড।
গত ৫ বছরে কুমিল্লা ইপিজেডের বিনিয়োগ ও রপ্তানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬১.০২ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি হয়েছে ৫৬৫.৮৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিনিয়োগ ৬৭.৪৬ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি ৮১৪.৮২ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ ৫০.২৩ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি ৭৯০.৯৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩-২০২৪ বিনিয়োগ ২৪.৪৯ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি ৭১১.৩৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ ২৫.৫৪ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি ৯০১.২২ মিলিয়ন।
এ পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, কুমিল্লা ইপিজেড-এর মাধ্যমে বছর বছর বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লা ইপিজেড। বাড়ছে অর্ডার, বাড়ছে রপ্তানি। প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর ইপিজেডে কাজ করছে ৬৬ শতাংশ নারী। প্রতি মাসে এখানকার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ প্রায় ২৫০কোটি টাকা। যা স্থানীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। কমেছে বেকারত্ব।
কুমিল্লা ইপিজেডে শ্রুতি টেক্সটাইলে কর্মরত দেবিদ্বারের মেয়ে সাবিনা আক্তার বলেন, আমি ৫ বছর ধরে কাজ করছি। এখন সিনিয়র অপারেটর হিসেবে আছি।
আমার বেতনে পরিবার নিয়ে ভালো আছি। সন্তানদেরও পড়াশোনা করাচ্ছি।
ব্র্যান্ডিক্স টেক্সটাইলে কাজ করতে এসেছেন খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ির বাসিন্দা মেমং মারমা। তিনি বলেন, আমি এবং আমার বউ এখানে চাকরি করছি। গ্রামে মা-বাবাকে খরচ দিচ্ছি, এখানে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলছি।
বেপজার তথ্য মতে, এখানে তৈরি পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স, প্লাস্টিক ও ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলোতে।
বিনিয়োগে যুক্ত আছে অন্তত ১৫টি দেশ। কুমিল্লা ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ এখন পর্যন্ত ৬১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২৭০ জন বিদেশি কর্মকর্তা এখানেই বাস করেন। ইপিজেডে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে আরও ৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে সব প্লট বরাদ্দ হয়ে যাওয়ায় নতুন শিল্প স্থাপনের সুযোগ নেই।
বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেপজা ও সরকারের সহযোগিতায় করোনা পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বেড়েছে। বর্তমানে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে অনেকেই। তবে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে বিদেশি ক্রেতাদের যাতায়াত সহজ হবে বলে জানান তারা।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বাসসকে বলেন, বর্তমানে বরাদ্দ দেওয়ার মতো প্লট খালি নেই। তবে যারা বর্তমানে কর্মরত আছেন এবং বিনিয়োগ করেছেন তারা নানাভাবে সম্প্রসারণ করছেন। ইতোমধ্যে বরাদ্দ নেয়া খালি অংশে তারা নতুন করে প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। ফলে কর্মসংস্থানও বাড়ছে। বিনিয়োগ খুব বেশি না বাড়লেও রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশাবাদী বেপজার এই কর্মকর্তা।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের খুব কাছেই জাতীয় অর্থনীতির শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে জানান দিচ্ছে কুমিল্লা ইপিজেড। নতুন করে প্লট সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে কর্মসংস্থান ও রপ্তানির সুযোগ। সূত্র : বাসস