সংক্ষিপ্ত সিলেবাস মুখস্থ করে ভালো ফলাফল অর্জন নয়—বরং সৃজনশীল শিক্ষাচর্চায় মেধার বিকাশ ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী, আদর্শ মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সম্প্রতি প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে সাউথ পয়েন্ট, বারিধারা। এ বিষয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ এয়ার কমডোর (অব.) কাজী আব্দুল মঈনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী না করে চিন্তাশীল ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছি। বিশেষ করে শিক্ষানুশীলনটাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার নিরিখে চাপমুক্ত ও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করছি, যাতে তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনসহ সার্বিকভাবেই ভালো করতে পারে।”
গত ১০ জুলাই প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষা–২০২৫ এর ফলাফল পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বারিধারা ক্যাম্পাসের ১৯৯ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই উত্তীর্ণ হয়। তন্মধ্যে ১৪০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ অর্জনসহ ‘এ’ পেয়েছে ৫৭ জন এবং এ-মাইনাস ২ জন। শুধু ২০২৫-ই নয়, পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও বারিধারা ক্যাম্পাসের ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়।
যেমন, গত উচ্চমাধ্যমিকে বারিধারার ১৩৪ জনের মধ্যে ১০০ জন জিপিএ–৫ পায়, বাকিরা সবাই ‘এ’ গ্রেডসহ ৪.৫০-এর ওপরে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ জন শিক্ষার্থীর সবাই জিপিএ–৫ অর্জন করে। ইংরেজি ভার্সনের বিজ্ঞান বিভাগে ১০৬ জনের মধ্যে ৯৫ জনই জিপিএ–৫ অর্জন করে।
২০০২ সালে রাজধানীর গুলশানে মাত্র ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৮,০০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের কর্ণধার, বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রকৌশলী এম. এ. রশিদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ভিকারুননিসা নূন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হামিদা আলীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যম—এই তিন মাধ্যমে প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। রাজধানীর মালিবাগ, বারিধারা, বনানী, মিরপুর, উত্তরা ও শ্যামপুরে মোট ছয়টি ক্যাম্পাসে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। বারিধারায় রয়েছে ৪টি সুরম্য ভবন এবং মালিবাগে ৬ বিঘা জমিতে নির্মিত হচ্ছে ১০-তলা আধুনিক ভবন, আর উত্তরায় অধিগৃহীত হয়েছে ৭ বিঘা জমি।
বর্ণাঢ্য ক্যাম্পাস বারিধারায় প্রবেশমুখেই চোখে পড়ে চলন্ত সিঁড়ি ও একাধিক লিফট। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়ও সচল রাখতে রয়েছে শক্তিশালী জেনারেটর। এ ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাংগুয়েজ ল্যাব ও আইসিটি ল্যাব, হাই-স্পিড ইন্টারনেট, আধুনিক লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন এবং সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট ক্লাসরুম। পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কাজও চলমান। শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল করে তুলতে ‘ব্রেইনস্টর্মিং’ প্রশ্নের মাধ্যমে পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হয়।
বারিধারায় আন্তর্জাতিক ইংরেজি মাধ্যমও চালু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া এই মাধ্যম ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্লে গ্রুপ থেকে স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ পর্যন্ত ক্লাস চালু করে প্রথম কোয়ার্টারেই শিক্ষার্থী সংখ্যা হয়েছে ১২০ জন। ক্যামব্রিজ কারিকুলাম অনুসরণে পরিচালিত এই মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষক কর্তৃক পাঠদান করা হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে ‘O and A’ Level চালু করা হবে এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যামব্রিজ চেকপয়েন্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে।
শুধু পড়ালেখা নয়, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও এগিয়ে তারা। এই ক্যাম্পাসের এক শিক্ষার্থী Aloha ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ব্রেন ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতা ২০২৫ এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে এই শাখা ইতোমধ্যেই অভিভাবকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ধারাবাহিক সম্মিলিত সাফল্য: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রায় প্রতি বছরই সম্মিলিত পাশের হার শতভাগ এবং প্রতি বছরই জিপিএ–৫ অর্জনের হার ৮০–৯০ শতাংশের মধ্যে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতিসহ উচ্চমাধ্যমিকে ৯ম স্থান অর্জনসহ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও গুলশান থানায় শীর্ষস্থান অর্জন করে সাউথ পয়েন্ট। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ১৮ জন শিক্ষার্থী। এবং এসএসসি বৃত্তি ২০২৫ এ ও সাউথ পয়েন্ট, বারিধারার ০৫ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পায়।
শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে স্পোর্টস ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, ডিবেট ক্লাব ও কালচারাল ফোরাম। তাই অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি যে সৃজনশীল শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে চলেছে—এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে