বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) এর আওতায় ইপিজেড শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান শুরু করল বেপজা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:৪৫

বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আজ (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে 'এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস)' এর আওতায় ক্ষতিপূরণের নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার শিকার ইপিজেডের পোশাক খাতের শ্রমিকগণ আর্থিক সুবিধা পাবেন।

আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের দুইজন মৃত শ্রমিকের পরিবার এবং কুমিল্লা ইপিজেডের একজন স্থায়ীভাবে অক্ষম শ্রমিককে তাদের ক্ষতিপূরণের নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে তারা পেনশন-এর মতো মাসিক আর্থিক সহায়তা পাবেন, যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আইএলও এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড)। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে বেপজা, আইএলও ও জিআইজেড-এর মধ্যে লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরবর্তীতে বেপজা, বিনিয়োগকারী, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, আইএলও ও জিআইজেড প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি এন্ডোর্সমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। আজ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে প্রথম তিনজন সুবিধাভোগীর জন্য ক্ষতিপূরণের নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড অনুমোদন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন, “আজকের দিনটি বাংলাদেশের শ্রমিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে একটি টেকসই, মানবিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কাঠামোতে রূপান্তরের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই নোটিস অফ অ্যাওয়ার্ড কেবল একটি কাগজ নয় - এটি আমাদের শ্রমিকদের প্রতি সংকটকালে পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতীক।”

তিনি আরও বলেন, “ইপিজেড শ্রমিকদের নিষ্ঠা, সততা ও পরিশ্রমই বেপজার সাফল্যের মূল ভিত্তি। তাই তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এ কারণেই আমরা ইআইএস পাইলট প্রকল্প চালু করেছি এবং ইপিজেড শ্রম আইনকে অধিকতর শ্রমিকবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া, আমরা একটি বিশেষ তহবিল গঠনের চেষ্টা করছি যেন হঠাৎ কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে সেই ফান্ড থেকে শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত ও ন্যায্যভাবে পরিশোধ করা যায়।” এটা আমাদের অঙ্গীকার যে বেপজা সবসময় শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করবে, কারণ তারাই আমাদের সাফল্যের মূল ভিত্তি, তিনি যোগ করেন।

আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর (নিযুক্ত) ম্যাক্স টুনন বলেন, “কোনো আর্থিক সহায়তাই একটি জীবনকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। তবে সময়োপযোগী ক্ষতিপূরণ পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি প্রদান করে। আমরা বেপজা ও অংশীদারদের সঙ্গে এ প্রকল্পকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড)-এর প্রতিনিধি ড. মাইকেল ক্লোড বলেন, “এই প্রকল্পটি শ্রমিক ও মালিক উভয়ের সুরক্ষায় একটি সম্মিলিত দায়িত্বের প্রতিফলন। জিআইজেড বাংলাদেশের শ্রম ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ এবং স্থিতিশীল করতে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত।”

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল এর মহাপরিচালক জনাব মোঃ মুনির হোসেন খান বলেন, “সরকার, মালিক, শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা কীভাবে একটি নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গঠনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, এ উদ্যোগ তারই প্রমাণ।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মোঃ আশরাফুল কবীর।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বেপজা কেবল বিনিয়োগ বৃদ্ধি নয়, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বেপজা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটটি ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করছে। পাশাপাশি পটুয়াখালী ও যশোরে দুটি নতুন ইপিজেড উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত বেপজাধীন জোনসমূহে ৪৫৪টি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে, যেখানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৭.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রপ্তানি আয় ১২০.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশের মোট আয়তনের মাত্র ০.০০১% জায়গায় অবস্থিত বেপজার নয়টি জোন গত অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির ১৭.০৩% অবদান রেখেছে।

বেপজা শ্রমিক কল্যাণে ইতিমধ্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদান, গর্ভবতী শ্রমিকদের পুষ্টি সহায়তা, ডে-কেয়ার সেন্টার, নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স এবং ২৪/৭ হেল্পলাইন চালু করেছে। ইআইএস প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব উদ্যোগ আরও শক্তিশালী হবে এবং সামাজিক সুরক্ষার একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছাবে।

এ বিভাগের আরো খবর