বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ১৬ বছরে নিয়মিত কর ছাড়: শ্বেতপত্র

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৮:৫২

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ প্রজ্ঞাপন বা এসআরও জারির মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপকে কর ছাড়ের সুযোগ করে দেয়। বেক্সিমকো, এস আলম, সামিটের মতো একাধিক ব্যবসায়ী গ্রুপ নিয়মিত এই সুবিধা পেয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের নিয়মিতভাবে কর মওকুফের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র।

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ প্রজ্ঞাপন বা এসআরও জারির মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপকে কর ছাড়ের সুযোগ করে দেয়। বেক্সিমকো, এস আলম, সামিটের মতো একাধিক ব্যবসায়ী গ্রুপ নিয়মিত এই সুবিধা পেয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিরূপণ এবং গত ১৬ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। ৯০ দিনের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন সরকার প্রধানের কাছে হস্তান্তর করে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বাসসকে বলেন, ‘বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেত।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এনবিআরকে বিভিন্ন সময়ে এসআরও জারি করতে হয়েছে, যার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা কর ছাড়ের সুযোগ পান। সুবিধাপ্রাপ্ত এই ব্যবসায়ীরা হয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা উঁচু পর্যায়ের আমলাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘শেখ হাসিনার সময়ে এসআরও (কর মওকুফ সুবিধা)-এর অতিরিক্ত ব্যবহার রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল, যা বাংলাদেশের কর নীতির কার্যকারিতা দুর্বল করেছে।’

এসআরও’র মাধ্যমে কর মওকুফ সুবিধা দেশের কর-ভিত্তি দুর্বল এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে বলে শ্বেতপত্রে চিহ্নিত করা হয়।

এতে বলা হয়, ‘এসআরও-র মাধ্যমে কর আইনে প্রায়ই অ্যাডহক পরিবর্তন স্বচ্ছতা ও পূর্বানুমানযোগ্যতার পরিপন্থী ছিল, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত করেছে এবং রাজস্ব আহরণ হ্রাস করেছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেক্সিমকো, এস আলম, সামিটের মতো একাধিক ব্যবসায়ী গ্রুপ নিয়মিত এই সুবিধা পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সামিট গ্রুপ ২০১৮ সালে তাদের এলএনজি টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে হিসাব বজায় রাখা এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শর্তে প্রকল্প আয়, বিদেশিদের আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ ফি এবং টেকনিক্যাল সহায়তা ফি, শেয়ার হস্তান্তর থেকে প্রাপ্ত মূলধনী লাভ এবং বিদেশি ঋণের সুদের ওপর পূর্ণ কর মওকুফ পায়।

গ্রুপটি আরও ১৫টি বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাংলাদেশে আগমনের তিন বছরের মধ্যে বিদেশিদের আয়, বিদেশি ঋণের সুদ, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং সহায়তা ফি এবং শেয়ার হস্তান্তর থেকে প্রাপ্ত মূলধনী লাভের ওপর পূর্ণ কর মওকুফ পেয়েছে।

অনুরূপভাবে অন্যান্য কোম্পানিও বিভিন্ন আকারে কর মওকুফ সুবিধা ভোগ করেছে। তবে শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে এই করছাড় সুবিধা পাওয়া অর্থের সুনির্দিষ্ট পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা গত ১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন গ্রহণ করে উল্লেখ করেছিলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। তিনি এর থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য পাঠাস্যূচিতে শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করারও কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আরও বলেন, ‘শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন পড়ে দেশের মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে গেছে এটা সবাই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু অর্থনীতিকে কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারছিল না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি হিসাব-নিকাশ করে এর পরিমাণ বের করে দিয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর