চলমান বন্যায় ফেনীতে প্রাণিসম্পদের ক্ষতি ৩৯৬ কোটি টাকার বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশ থেকে ফিরে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা শরিফ। চারটি পোলট্রি খামার ছিল তার। বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তার খামারে থাকা সাত হাজার মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার। কিছু সরিয়ে বাড়ির ছাদে নিতে পারলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সেগুলোকেও বাঁচাতে পারেননি।
শরিফ ইউএনবিকে বলেন, ‘কোনোদিন বন্যা হয়নি এই এলাকায়। এ রকম কিছু একটা যে এসে আমাদের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা ভাবতে পারিনি। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।
‘আমরা পাইকারিভাবে পোল্ট্রির খাবার বিক্রি করতাম। যাদের কাছে বিক্রি করেছি, তারাও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন মোহাম্মদ আলম, তবে সেটি এখন পানির নিচে। খামারে ২ হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে।
ওই খামারের বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলো আলম ও তার ছেলে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রাখতে পেরেছেন। কিছু মুরগি অর্ধেক দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
আলম জানান, ক্ষতি গুনতে হবে প্রায় দুই লাখ টাকা।
ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের আবদুল কুদ্দুস সৌদি আরব থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ধার দেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৬০ লাখ দিয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি ব্যবসা। দুই বছর ধরে বেশ ভালোভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। বন্যা কেড়ে নিলো তার সব স্বপ্ন।
তিনি জানান, ২৩ আগস্ট পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হারান তার খামারের ৩ হাজার লেয়ারসহ ব্রয়লার ও ৫ হাজার সোনালি মুরগি। সহায় সম্বল সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।
ইউএনবি জানায়, এমন বিপর্যস্ত ও অসহায় অবস্থায় পড়েছেন ফেনীর আড়াই হাজারেরও বেশি পোল্ট্রি, গবাদি পশু ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তারা। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা কেড়ে নিয়েছে তাদের সবকিছু।
বন্যা ভেসে গেছে লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগিসহ ২ হাজার ৫০০ মুরগির খামার।
বন্যায় জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এ ছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির বিপরীতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ইউএনবিকে জানায়, ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।
এই অবস্থায় ক্ষতি সামলে নিজেদের সব গুছিয়ে নিতে সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনার আশ্বাস চান এসব উদ্যোক্তা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যায় ৬৪ হাজার ১৬১টি গবাদিপশু ভেসে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০টি হাঁস-মুরগির। সব মিলিয়ে ফেনীতে ৩৯৬ কোটি ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খাদ্যসহ সব ধরনের সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।