শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতার জের এখনও কাটেনি। এই প্রেক্ষাপট অবশ্য শুরু হয় জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। আন্দোলন আর সহিংসতা দমনে সে সময় কারফিউ জারি করে সরকার। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে তিনদিন সাধারণ ছুটি দিয়ে টানা পাঁচদিন বন্ধ রাখা হয় অফিস-আদালত ও ব্যাংক। বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট। এর ফলে আন্তর্জাতিক ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যম ’সুইফট’ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এমন মাসে স্বভাবতই ভালো রেমিট্যান্স প্রত্যাশা করা যায় না। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সদ্যবিদায়ী জুলাই মাসের হিসাব বলছে, গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে এই মাসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে মিলেছে এমন তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, জুলাইয়ে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। এর আগে এতটা কম রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
শুধু তাই নয়, আগের মাস জুনের চেয়ে প্রবাসী আয় অনেকটাই কমেছে জুলাইয়ে। জুনে ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী। তবে ঠিক পরের মাসেই রেমিট্যান্স কম এলো ৬৩ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায়ও সদ্য বিদায়ী মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৭ কোটি ডলার।
তবে এর আগের দুই মাসে প্রবাসী আয়ে বেশ ভালো করছিল বাংলাদেশ। সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি হলে টানা বন্ধের মধ্যে পড়ে লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় দেশের ব্যাংকগুলোতে। বন্ধ হয়ে পড়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এটিএম বুথ সেবাসহ মোবাইল ব্যাংকিং।
তাতে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ছয় দিনে দেশে প্রবাসী আয় আসে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ জুলাইয়ের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ছয় দিনে আসা রেমিট্যান্স আগের একদিনের চেয়েও কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১ থেকে ২০ জুলাই আসে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ২৮ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তবে শেষ তিন দিনে কিভাবে প্রায় ২৫ কোটি ডলার এলো তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৩১ জুলাই এক দিনেই প্রায় ১২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
রেমিট্যান্সের অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করলেও পুরো মাসের প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, জুলাইয়ের বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ব্যাংক লেনদেন না হওয়ায় রেমিট্যান্স কিছুটা কমেছে। প্রবাসীরা চাইলেও অনেকে সময়মতো রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো প্রভাব রেমিট্যান্সে পড়েনি বলেও জানান তিনি।
তবে রেমিট্যান্স আসার গল্পটা দারুণ ছিলো গত দুই মাস ধরেই। গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, তার আগের মাস মে-তে মোট প্রবাসী আয় আসে ২২৫ কোটি ডলার, যা সেই সময়ের হিসাবে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিলো।
চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সবমিলে জুলাইয়ের ২৪ দিনে প্রবাসী আয় যোগ হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার।