সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার জের এখনও কাটেনি। একের পর এক নিহত হওয়ার খবর, সরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, তারপর সারাদেশে কারফিউ জারি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় আরও তিনদিন। ফলে টানা পাঁচদিন বন্ধ ছিলো অফিস-আদালত ও ব্যাংক। এসবের ফলে দেশের অভ্যন্তরে কার্যত বন্ধ ছিলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংকের এটিএম বুথ কিংবা অনলাইন লেনদেনও করতে পারেননি গ্রাহকরা। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং।
এমন পরিস্থিতিতে ভাটা পড়ে প্রবাস থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সে। সহিংসতার সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে রেমিট্যান্স আসা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ছয় দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ছয় দিনে আসা রেমিট্যান্স একদিনের চেয়েও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অবশ্য ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে মাত্র একদিন। ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। এরপর মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময়ে ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়। ছিলো না ইন্টারনেট সেবা। তাতে অনলাইন কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে। ২৪ জুলাই বুধবার ব্যাংক চালু হয় আধা বেলার জন্য।
ব্যাংক বন্ধ থাকায় ১৯ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা সম্ভব ছিলো না। এ সময়ে যারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বুধবার প্রথম দিনেই তা ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যদি কেউ বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠান ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধ করতে বাধ্য। তবে ওই দেশের রেমিট্যান্স হাউজগুলো যদি তা ঠিক সময়ে না পাঠিয়ে ধরে রাখে তাহলে তা আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এসব কারণে বুধবার রেমিট্যান্স জমা হয়নি।
অথচ রেমিট্যান্স আসার চিত্রটা দারুণ ছিলো গত দুই মাস ধরে। গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসে থাকা প্রায় দেড় কোটি বাঙালি, যা এক মাসের হিসাবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, তার আগের মাস মে-তে মোট প্রবাসী আয় আসে ২২৫ কোটি ডলার, যা সেই সময়ের হিসাবে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিলো।
চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সবমিলে জুলাইয়ের ২৪ দিনে প্রবাসী আয় যোগ হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার।