বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রক্তক্ষরণ হচ্ছে ক্রেতার, বন্ধ হওয়ার আলামত নেই

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২৪ ২০:৫৬

‘কিছু ব্যবসায়ীর কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে, দেখার কেউ নাই। এটাই যেন সত্যিকারের মগের মুল্লুক।’

বেসরকারি চাকরিজীবী আনিস রহমান এসেছেন নিত্যপণ্যের বাজারে। শনিবার ছুটির দিনে প্রায় এক ঘন্টা সময় ধরে বাজারের এপাশ থেকে ওপাশে হাঁটাহাটি করছেন। কিন্তু বাজারের ব্যাগ তখনও শূন্য।

মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে কথা হলো তার সঙ্গে। জানালেন তার সবচেয়ে অপছন্দের কাজ এখন বাজারে আসা। হাসতে হাসতে বললেন, ‘বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আমাদের খেতে হয়, এটাই বড় সমস্যা! একটা সময় আমার বাজারে আসতে, কিছু কেনাকাটা করতে খুব ভালো লাগতো। আর এখন ভয় নিয়ে বাজারে আসি।’

তবে মুখে হাসি থাকলেও আনিসের পুরো মুখাবয়বে ছিলো স্পষ্টত চাপা ক্ষোভ আর রাজ্যের হতাশা।

‘বাজারে কিচ্ছু কেনা যায় না রে ভাই; মাছ, মাংস, সবজি, মুদি সদাই সব জায়গায় মনে হয় যেন আগুন লাগছে’- বলছিলেন তিনি।

নিত্যপণ্যের বাজারে আসা সব ক্রেতার মুখেই এখন ক্ষোভ আর হতাশা। আনিসের মতো মধ্যম আয়ের মানুষের যখন এমন মানসিক অবস্থা তখন নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টটা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। কারণ তাদেরকেও তো একই বাজার থেকে একই দামে পণ্য কিনতে হয়।

কথা হলো মর্জিনা বেগমের সঙ্গে, যিনি ৩০০ টাকা নিয়ে বাজার করতে এসেছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বুয়া হিসেবে কাজ করে মাসে চার হাজার টাকা আয় করেন বলে জানালেন তিনি। স্বামী রিকশা চালান। তবে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পায়ে ব্যথা নিয়ে ঘরে বসে আছেন। এখন ধার করে রুম ভাড়ার পাঁচ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।

নিজের আয় দিয়ে শুধু চাল, ডাল আর মাঝে মধ্যে ডিম কিনে খেয়ে বেঁচে আছেন। শেষ কবে মাছ কিনেছেন- এমন প্রশ্নে চোখের কোণে জল দেখা গেলো মর্জিনার। বললেন- ‘বাবারে, যে বাসায় কাম করি হেরা মাঝেমধ্যে মাছ-ভাত খাইতে দ্যায়। সত্যি কথা কইতে কি, মাছ আমরা আর কিনা খাইতে পারি না।’

হিসাব তুলে ধরে মর্জিনা বলেন, ‘তিনশ টাকা লইয়া আইছি। ভাবছিলাম এক ডজন ডিম আর তেল কিনুম। এহন দেহি ডিমের ডজন অনেক বেশি। হের লাইগা দুই আলি ডিম আর তেল কিনতাছি।’

পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, ‘আফনেরা তো সাম্বাদিক; দাম কবে কমবো কন দেহি?’

বাকরুদ্ধ হয়ে হাতের ইশায়ায় বিদায় নিয়ে আসার সময় কানে এলো- ‘যারা আমগোরে এমন কষ্টে রাইখা ব্যবসা কইরা লাখ লাখ টাকা কামাইতাছে আল্লাহ যেনো ওগোর বিচার দুনিয়াতেই করে।’

মর্জিনা বেগমদের মনের এই রক্তক্ষরণ আর আর্তনাদ পৌঁছায় না বড় ব্যবসায়ীদের কানে। বিশ্ববাজারে যেখানে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম কমে এসেছে সেখানে উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের আমদানি করা নিত্যপণ্য। জানতে চাইলেই বিক্রেতারা দিচ্ছেন সেই পুরনো অযুহাত- ডলারের দাম বেশি অথবা সরকারি ট্যাক্স বেশি।

তবে সম্প্রতি সবজির দাম ছাড়িয়ে গেছে অন্য যেকোনো বছরকে। মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে লম্বা বেগুন চাওয়া হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি, গোল বেগুন ১২০ টাকা। এছাড়া টমেটো ২০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কাকরোল ১০০-১২০ টাকা, কাঁচা পেপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

শুধু পটল পাওয়া যাচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ১০০ টাকা ছাড়িয়ে। কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমলেও এখনও ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এখানে সবজির দাম এতো বেশি কেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বললেন, ‘এখন বর্ষাকাল। সবজির দাম বেশি হবে।’

এদিকে বাজারে এখনও কমেনি আলুর দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আমদানি করা পেঁয়াজও এখন ৯০ টাকা কেজি। দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের দাম ১১০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ কিনতে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা।

মাংসের বাজারেও প্রায় একই চিত্র। কমেনি গরুর মাংসের দাম। বেড়ে যাওয়া দামেই এখন‌ো বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার, কক কিংবা দেশি মুরগি। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। সোনালী ৩২০ টাকা কেজি ও দেশি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।

মুরগি কিনতে আসা এক ক্রেতা বললেন, ‘কিছু ব্যবসায়ীর কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে, দেখার কেউ নাই। এটাই যেন সত্যিকারের মগের মুল্লুক।’

এ বিভাগের আরো খবর