বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি কাঠের বাড়ি বেলজিয়ামে রপ্তানি হচ্ছে। বাড়ির কাঠামো, দেয়াল, দরোজা-জানালা এমনকি ছাদও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। সে সুবাদে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটি হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি পথ। সূত্র: ইউএনবি
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উদ্যোগ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ।
পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন পণ্য ব্যবহার করে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১২০টি বসতবাড়ি তৈরির অর্ডার পান বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। এরপর থেকে পরিবেশবান্ধব বসতবাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবার।
ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, বেলজিয়ামের একটি ইকো পার্কের জন্য ক্রেতারা অর্ডার দিয়েছেন। পরিবেশবান্ধব কাঠের তৈরি এমন ১২০টি বসতঘর তাদের প্রয়োজন। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব ঘর বেলজিয়ামের ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে, দেশি মেহগনি কাঠ দিয়ে এসব ঘর তৈরি করতে হবে। এছাড়া এসব বাড়ির কাঁচামাল বায়োগ্রেডিবল বা পরিবেশে মিশে যায় এমন হতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পণ্য চলবে না।’
বাগেরহাটে ন্যাচারাল ফাইবার-এর কারখানায় তৈরি করা কাঠের বাড়ির ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে বসতবাড়ি তৈরি করা হয় এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কাঠের এসব বসতবাড়ি। শ্রমিকরা তৈরি করছেন বসতঘরের দরোজা-জানালা, ফ্রেম ও দেয়াল। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং ও পালিশের মাধ্যমে শেষ করা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বসতবাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ।
এই ঘর ১১ মিটার লম্বা এবং সোয়া চার মিটার চওড়া। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এই বাড়ির বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খণ্ড খণ্ড করা হয়। এর ফলে পুরো বাড়িটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহন করা সহজ হয়। পরে এই খণ্ডগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যেকোনো জায়গায় স্থাপন করা যায়।
কারখানার কাঠমিস্ত্রি মোজাহিদ বলেন, ‘আমাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারপর ডিজাইন দেখে সম্পূর্ণ একটি বসতঘর তৈরি করেছি। এরপর কোম্পানি ও বিদেশি লোকজন তা দেখে পছন্দ করছে। এখন আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। এখানে প্রায় দুইশ’ শ্রমিক কাজ করছে।’
কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে কখনও এই ঘর তৈরি করিনি। এখন দেখছি খুবই সুন্দর হয়েছে ঘরগুলো।’
সাইফুল নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের হাতে তৈরি কাঠের ঘর বিদেশে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমরা এই ঘর তৈরি করতে পেরে আনন্দিত।’
বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালট্যান্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন বলেন, ‘সম্পূর্ণ স্থানীয় কাঠ মেহগনি দিয়ে তৈরি বসতঘর যদি মোংলা দিয়ে রপ্তানি করা হতো তাহলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হতো। কিন্তু আমাদের পণ্য পাঠাতে হয় চট্রগ্রাম বন্দর থেকে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি- এই রপ্তানি কাজে আমরা যেন মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারি।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের শিল্পনগরী কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন, ‘এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। দেশীয় পণ্য বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
এর আগে কারখানাটিতে তৈরি কাঠের বিভিন্ন পণ্য বেশ সাড়া ফেলেছিল ইউরোপের বাজারে। সেসময় প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি হতো কাঠের সাইকেল, সানবেড, হোটেল বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্য। তবে বর্তমানে শুধু কাঠের বাড়ি তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।