সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিক হারে কমছে বাংলাদেশি গ্রাহকদের আমানত। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশিদের মোট আমানতের প্রায় ৬৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
শুধু ২০২২ সালেই সুইস ব্যাংকগুলো থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেন বাংলাদেশিরা। ২০২৩ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল।
এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ২৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৩২ টাকা হিসেবে)। অথচ, ওই বছরের শুরুতে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁ।
এ হিসেবে ২০২৩ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৬৫ শতাংশ অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তবে, এর এক বছর আগে এই আমানত হ্রাসের হার ছিল আরও বেশি। ২০২১ সালে সেখানে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্রাঁ। ২০২২ সালের শেষে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ৫ কোটি ফ্রাঁতে। এরপর ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ তা পৌনে ২ কোটি ফ্রাঁতে পৌঁছেছে।
অর্থাৎ, গত দুই বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকার মতো।
উল্লেখ্য, গোপন অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য বিশ্বজুড়ে খাতি রয়েছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর। দেশটির ব্যাংকিং নীতির কল্যাণে কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে পারে ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকার একটি বড় অংশ ঢোকে ইউরোপের এই দেশটির ব্যাংকিং খাতে।
তবে, এক দশক ধরে নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও মোটা দাগে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছে এসএনবি। আর তাতেই উঠে আসছে এমন সব চমকপ্রদ তথ্য।
প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশিদের আমানত বৃদ্ধি পেলেও হঠাৎ করে কেন এই বিপরীতমুখী ধারা শুরু হয়েছে, তা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের ধারণা, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায় বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের ধনীরাই এখন অবৈধ টাকা জমা রাখতে লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও বারমুডার মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশ থেকে এখনও প্রতি বছর অর্থ পাচার বাড়ছে। তবে পাচারের এই অর্থ আগে সুইস ব্যাংকে গোপনে রাখার সুযোগ পেলেও এখন আর সেই সুযোগ পাচ্ছে না পাচারকারীরা। তাই গোপনীয়তা রক্ষা হয়, এমন কোনো জায়গায়, যেমন: কানাডা, দুবাই বা অন্য কোনো দেশে সেসব অর্থ সরিয়ে নিতে পারেন তারা।
অবশ্য সেখানে শুধু বাংলাদেশিদের অর্থই কমছে না; ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নাগরিকদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের সুইস ব্যাংকে রাখা আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে।