বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ আজ

  •    
  • ৬ জুন, ২০২৪ ০০:০৩

জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে যাওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার চারশ’ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মোট আকার দুলাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি দুলাখ ৫১ হাজার ছয়শ’ কোটি টাকা।

সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানেই কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। বিপরীতে কিছু পণ্যের দাম কমলেও কমতে পারে। তবে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা বাজেট হলো সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের পুরো বছরের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান। সেখানে কোথা থেকে আয় আসবে আবার কোথায় তা ব্যয় হবে তা চূড়ান্ত করা হয়।

রাষ্ট্রের সেই আয়-ব্যয়ের খতিয়ান কালো ব্রিফকেসে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।

প্রথা অনুযায়ী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবনা জাতীয় সামনে তুলে ধরবেন। বাজেট ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে তা জানা যাবে তার পরই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী জুলাই থেকে তার পরের জুন পর্যন্ত সরকার ব্যয় করতে চায় এই অর্থ। যা এর আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা বেশি।

ব্যয়ের বিশাল এই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায় হওয়া কর থেকে। তাদের ওপর থাকছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা।

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত খাত থেকে কর আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয় ইতোমধ্যে বাজেট প্রস্তাবের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ১৬তম বাজেট। আর বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর জন্য এটি প্রথম বাজেট। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট এটি।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেট উত্থাপনের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদিত হবে। দুপুর ১২টায় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের অনুমতি পাওয়ার পরই তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট জিডিপির আকার হতে যাচ্ছে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের কৃষক থেকে শহরের বড় কর্মকর্তা সবার সম্মিলিত উৎপাদনের আর্থিক মূল্য হবে এটি। যেখানে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা এবার কিছুটা কমিয়ে এনেছেন অর্থমন্ত্রী। বড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়াতেই বেশি নজর দিতে চেয়েছেন নতুন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। তাই আগের বছরের চেয়ে খানিকটা কমিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা- কমে আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অর্থমন্ত্রীও বুঝতে পেরেছেন সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে নিত্যপণ্যের দামে। তাই তো প্রায় দশ শতাংশের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি তিনি নামিয়ে আনতে চান ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। কাজটা মোটেও সহজ হবে না তা ঠিকই জানেন অর্থমন্ত্রী।

মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ছাড় দিয়ে পলিসি নির্ধারণ করার কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সম্ভব। তবে তার জন্য সরকারকে আরও বেশি এদিকে নজর দিতে হবে। ডলারের দাম এখন বাড়ছে না। ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদ হার বাড়িয়েছে- যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হবে কতটা?

প্রতিবছরই বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হয় বড় অংকের রাজস্ব আদায়কে। এবারের বাজেটেও থাকছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে শুধু রাজস্ব বোর্ডকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কাজটি মোটেই সহজ হবে না। কারণ চলতি অর্থবছর থেকে প্রায় একশ’ কোটি টাকা বাড়তি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে এটি। তারা বলছেন, এজন্য রাজস্ব বোর্ডে সংস্কারের বিকল্প নেই।

তবে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই আশাবাদী আইএমএফের ঋণ ছাড়করণে রাজস্বের শর্ত নিয়ে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে রাজস্ব সংস্কারে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের মতে, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে সেজন্য সাধারণ মানুষ আর যারা নিয়মিত কর দেন তাদের ওপর চাপ না বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। ব্যবসায়ী নেতারাও বার বার দাবি তুলেছেন নতুন করদাতা সৃষ্টি ও করজাল বাড়ানোর জন্য।

বাজেটের ঘাটতি পূরণ যেভাবে

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও থাকছে বড় অংকের ঘাটতি। এবারের বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫১ হাজার ছয়শ’ কোটি টাকায়। আর তা পূরণে অর্থমন্ত্রীকে ভরসা করতে হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণের ওপর।

এবারের বাজেটে নতুন করে বিদেমি ঋণ নেয়া হবে ৯০ হাজার সাতশ’ কোটি টাকা। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ৩৭ হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকা।

এছাড়া ব্যাংকবর্হিভূত খাত থেকে নেয়া হবে আরও ২৩ হাজার চারশ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলো থেকে নেয়া হবে ১৫ হাজার চারশ’ কোটি টাকা।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি ও বেশি সুদের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সাবধানী হতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর