সদ্য বিদায়ী মে মাসে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন (২২৫ কোটি) ডলার। গত বছরের একই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন (১৭০ কোটি) ডলার। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে দেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার বা ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরপর দুই মাস দেশে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়াল। এর মধ্যে সবশেষ মাসে (মে) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।’
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুকে কেন্দ্র করে বৈধপথে প্রবাসী আয় বেড়েছে। তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া ৮ মে ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করে।
মূলত ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। তার আগে ব্যাংক খাতে প্রতি ডলারের বেঁধে দেওয়া দাম ছিল ১১০ টাকা। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পর এক লাফে প্রতি ডলারের দাম ৭ টাকা বেড়ে যায়। তাই বৈধপথে ডলারের ভালো দাম পাওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মে মাসে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে। তাদের মতে, প্রতিবছরই মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসবকে (ঈদুল আজহা) সামনে রেখে অভিবাসী কর্মীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠান।
এদিকে একক মাস হিসেবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়েছে সদ্য সমাপ্ত মে মাসে। পাশাপাশি পরপর দুই মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে গত এপ্রিলে ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার এবং মে মাসে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। সে হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২১ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ আয় এসেছিল ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৯২৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৭ জন। আর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গেছেন। কিন্তু সেই অনুপাতে দেশের প্রবাসী আয় বাড়েনি। বর্তমানে সব মিলিয়ে দেশের বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ২ হাজার ৩৬০ জন।