বাংলাদেশ ব্যাংক এক ধাপে ডলারের বিনিময় হার ৭ টাকা বাড়ানোর একদিন পর বৃহস্পতিবার অনানুষ্ঠানিক খোলা বাজার থেকে ডলার প্রায় উধাও হয়ে যায়।
টাকায় ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বুধবার ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে একদিনেই ডলারের বিনিময় হার ৭ টাকা বাড়িয়ে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ফলে ভবিষ্যতে বাড়তি মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীদের মুদ্রা মজুতদারির খবরে খোলা বাজারে ডলার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি মরিয়া ক্রেতারা তাদের বিদেশে যাতায়াত ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে খোলা বাজারে এক ডলারের জন্য ১২৫ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মুনিরা আহসান বৃহস্পতিবার ইউএনবিকে বলেন, ‘থাইল্যান্ডে আমার বাবার চিকিৎসার জন্য খোলা বাজার থেকে পাঁচ হাজার ডলার কেনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দেখেছি, খোলা বাজারে প্রতি ডলার ১২৫ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে।’
মুনিরা জানালেন, এর আগে তিনি ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো একাধিক নথি চেয়েছিল এবং পাঁচ হাজার ডলার ক্রয় করা নিয়ে তাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। একটি ব্যাংক পাঁচ ধরনের কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তারা মাত্র ৫০০ ডলার সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টনের এক মানি চেঞ্জার বলেন, ৮ মে পর্যন্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দর ১১৭ টাকার আশপাশে থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিনিময় হার বাড়ানোর ঘোষণার পর হঠাৎ করে তা বেড়ে গেছে।
‘এটা শুধু ইউএস ডলারের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। হজ মৌসুম শুরু হওয়ায় সৌদি রিয়ালের চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্য মুদ্রার বিনিময় হারও রাতারাতি ৪-৫ টাকা বেড়ে গেছে।’
নগদ ডলার ও অন্যান্য প্রধান মুদ্রার প্রধান উৎস খোলা বাজারে একদিনের ব্যবধানে বিনিময় হার ৭ টাকা বাড়ানোর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের একদিন পরই বিনিময় হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
মান্নান মিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি করছেন। বৃহস্পতিবার ক্রেতা পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ইউএনবি। তিনি প্রথমে বলেন যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তিনি ১১৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে রাজি হন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে এবং মানুষ ডলার কিনতে ব্যাংকে যেতে পারে।
‘আমাদের খুচরা বিক্রির জন্য ডলারের পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে এবং সরবরাহ ভালো। এখন কে বিক্রি করবে বা করবে না সেটা তার ব্যাপার। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পাননি তারা ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারেন। খুচরা ও এলসি চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখন ৫০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খোলা বাজারে ডলারের সাময়িক ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
‘ডলার ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রার দর আরও বাড়ানোর সংকেত পেয়েছেন। আর সে কারণে তারা স্টক রাখার পর ডলার ঘাটতির কথা বলছেন। সরবরাহ বাড়লে বিনিময় হার কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খোলাবাজারে বিনিময় হার সব সময়ই ব্যাংকের চেয়ে বেশি থাকে। কখনও কখনও বাজার তদারকির অভাবে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়ে যায়।’