স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ‘প্রত্যয় স্কিম’ চালু করেছে সরকার।
এই স্কিম চালুর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামী ১ জুলাই এবং তার পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এছাড়া প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।
সরকার গত ১৩ মার্চ এ বিষয়ে দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করেছে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর-উত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরিতে যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কমসংখ্যক স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ (কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড) ব্যবস্থা প্রযোজ্য। এই ব্যবস্থায় কর্মচারীরা চাকরি শেষে অবসর সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। কিন্তু মাসিক কোনো পেনশন প্রাপ্য হন না। ফলে অবসর-উত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই তারা আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন। কর্মচারীদের অবসর-উত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে।
প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, যা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন হতে কর্তন করা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। এরপর উভয় অর্থ এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং এই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেয়া হবে।
বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ ভাগ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দিয়ে থাকে। প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা দিলে তিনি অবসরের পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন।
এক্ষেত্রে ৩০ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মিলে সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান তাহলে ১৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ। আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় এ পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফা বেশি হলে মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে বলে চাঁদা দাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগলব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারিত হবে।
জমাকৃত চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে।
স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারি পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন।