খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বা নিয়মিত করা নিয়ে সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের। তবে এখন পুরোনো-নতুন প্রায় সব খেলাপিই তাদের ঋণ কোনো এককালীন জমা (ডাউন পেমেন্ট) ছাড়াই বা নামমাত্র জমা দিয়ে নিয়মিত করে নিচ্ছেন।
২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
পুনঃতফসিল নীতিমালায় শিথিলতা আনার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিলে ঝুঁকছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।
হিসাব বলছে, ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের একই সময়ে পুনঃতফসিল ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বা ৬৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের মধ্যে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় ৩ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা।
পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পুনঃতফসিল করা হয় ১০ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পুনঃতফসিল করা হয় ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।
গত বছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করেছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ মাসে বেসরকারি ব্যাংক ১৫ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে।
সরকারি ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৪৩৪ কোটি, বিদেশি ব্যাংক ১০০ কোটি ২০ লাখ এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে।
আগে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে হলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। এখন তা আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমা দিলেই করা যাচ্ছে। আগে এসব ঋণ পরিশোধের সময় ছিল সর্বোচ্চ দুই বছর। এখন ৫ থেকে ৮ বছর সময় পাচ্ছে। এ ছাড়া আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। এখন সেই ক্ষমতা পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ইচ্ছামতো সুবিধা দিয়ে পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছে। এ জন্য ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিকভাবে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১৮ জুলাই পুনঃতফসিল নীতিমালা শিথিল করা হয়। শিথিল করার পর গত ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ৪২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। শিথিলতার আগের ১৫ মাসে করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ পুনঃতফসিল বেড়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা।
এদিকে পুনঃতফসিল করা ঋণের বিপরীতে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৩০৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এর পরিমাণ ছিল ৩৮৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর তিন মাস আগে জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।