দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে অনেক পক্ষই। তবে সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন- তা নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে কার ওপর আস্থা রাখবেন শেখ হাসিনা- তা নিয়ে ঝড় উঠছে চায়ের কাপেও। তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মনে করেন, যে-ই দায়িত্ব নিয়ে আসুক, তার জন্য অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, চ্যালেঞ্জের জায়গা হবে অর্থনীতি। সেজন্য আগামীর সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে অর্থনীতিতে।’
নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী কে হবেন?- জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কে অর্থমন্ত্রী হবেন সেটা নতুন সরকারের বিষয়, শপথ হলেই তা জানতে পারবেন।’
আপনি আবারেও দায়িত্ব পেলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে এখনও অনেক অনাবিষ্কৃত খাত রয়েছে। এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’
বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং সেটা সম্ভব বলেই মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
এ সময় তিনি আইএমএফের দেয়া ঋণের শর্ত নিয়েও কথা বলেন। বলেন, ‘আইএমএফ যত টার্গেট দিয়েছে, তার সব পূরণ করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে রিজার্ভের ক্ষেত্রে। রিজার্ভ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। অর্থনীতির মূল যে এলাকাগুলো আছে, সেটা হচ্ছে আমাদের আমাদের রিজার্ভ। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের রিজার্ভ যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে।’
আইএমএফের টার্গেট নিয়ে এ সময় উল্টো প্রশ্ন তোলেন মুস্তফা কামাল। বলেন, ‘আইএমএফ কী টার্গেট দিয়েছে বলেন? ১২ দিনের ইনকাম হচ্ছে আমাদের লায়াবেলিটি। আমাদের যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, আমরা তো সেই পরিমাণও ঋণ নিচ্ছি না। বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের যথেষ্ট ভালো আছে, এটাকে ডাবল করা যাবে।’
ব্যাংকিং খাত নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আমরা রিফর্ম এনেছি। এর জন্যই এখনও জীবিত আছি আমরা। যদি আমাদের ৬/৯ সুদের হার না থাকত, তাহলে সুদের হার ২২/২৪ শতাংশে উঠে যেতে পারত। তাহলে এতদিনে আমরা কোথায় চলে যেতাম বলেন? হারিয়ে যেতাম।’
অর্থনীতি ও দেশের মানুষ হারিয়ে যেত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তবে প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, এভাবে অর্থনীতি ঠিক রাখা সম্ভব।’
বর্তমানে আবারও সুদহার বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুদের হার বাড়তেই পারে। যদি তা অ্যাকুমুলেট করা যায় তাহলে এভাবে হতেই পারে। ওই সময়ে আমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব ছিলো না। আমাদের ছোট ব্যবসায়ী, মাঝারি উদ্যোক্তা এমনকি বড় উদ্যোক্তারাও সেই সময়ে চাপে ছিল। আমরা তাদেরকে রক্ষা করতে পেরেছি।’
অর্থমন্ত্রী এসময় দাবি করেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণেও সরকারের চেষ্টার কমতি ছিল না। খেলাপি যাতে না বাড়ে সেজন্য সুদের হার বাস্তব অবস্থায় নিয়ে এলাম। সময় বাড়িয়ে দিয়েছি যাতে কোনোভাবেই খেলাপি না হয়।’
তবে সরকারের নানা প্রচেষ্টার পরও দুয়েক জায়গায় অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আশ্বস্ত করেন, ‘নতুন সরকার এলে এগুলোও থাকবে না।’