আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণে ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ বাড়ানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২৬ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংক থেকেও গত এক সপ্তাহে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি কেনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ডলার কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলোকে প্রতিনিয়ত ডলার সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা। আবার কিছু ব্যাংক থেকে ডলার কেনাও হচ্ছে।
‘চলতি সপ্তাহে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে বলে আমি জেনেছি। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ফরেক্স ডলার ভালো রয়েছে। তাই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ রাখতে হবে ১৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে দেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আইএমএফের শর্ত করতে পূরণে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়াতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে দেশের গ্রস রিজার্ভ রয়েছে ২০ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
নিট রিজার্ভ হিসাব করার সময়ে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া বিলসহ এক বছরের কম সময় মেয়াদের দায়গুলো বাদ দেয় আইএমএফ। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ ও আইএমএফের কাছে দেয়া নিট রিজার্ভের হিসাবে পার্থক্য থেকে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত খাদ্য, জ্বালানি, সারসহ কয়েক ধরনের পণ্যের আমদানি বিল পরিশোধে এসব ডলার বিক্রি করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে বিদেশি উৎস থেকে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ডলার আসার সুযোগ নেই। তাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা ছাড়া এই অল্প সময়ের মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব নয়।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বেশ কয়েকটি ইসলামি ধারার ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বাবদ ঘাটতিতে রয়েছে। ডলার বিক্রি করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সেই ঘাটতি মেটানোরও সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আমানত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়; যা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও নামে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘কোনো ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় নিট ওপেন পজিশনে সারপ্লাস অবস্থায় থাকলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারে।’
বর্তমানে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স হিসেবে ডলার সংগ্রহ করছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অবশ্য এর বাইরেও ব্যাংকগুলো নিজেদের ফান্ড থেকে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে।
ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনাতেই ছিল ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা হবে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ইসলামি ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংক বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করেছে।