শীতের সকালে নাস্তার টেবিলে অন্য খাবারের পাশাপাশি মুড়ির মোয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে একটি অন্যতম আর্কষণ। শীত আসলেই নতুন ধান থেকে মুড়ি তৈরি করে সেই মুড়ি থেকে গুড় দিয়ে মোয়াসহ বিভিন্ন নাস্তা তেরিতে শুরু হয়ে যায় পরিবারের নারী সদস্যদের তোড়জোড়।
তবে এটি এখন আর শুধু ঘড়ে তৈরিতে সীমাবদ্ধ নেই। বাণিজ্যিকভাবে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি হচ্ছে। এই মোয়া বিক্রি করে লাভবান হবার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে অনেকের।
কুড়িগ্রামে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতকালীন নানা ধরনের খাবার। আখ এবং খেজুর গুড় ঘন জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে সেখানে সাদা ধবধবে মুড়ি মাখিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ির মোয়া বা মলা।
এ মুখরোচক খাবারটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছেন জেলার উলিপুর উপজলোর থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের গোড়াই পিয়ার গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম শাপলা বেগম দম্পতি। তারা বাড়িতেই বানজ্যিকভাবে হাতে তৈরি করছেন মোয়া। তাদের তৈরি সুস্বাদু এই মোয়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজলোর হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি একশ পিচ মোয়া বিক্রি হয়ে তিনশত টাকায়। মেকারের পেশায় থাকাকালীন সাইফুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তেমন ভারী কাজ করতে না পারায় ২০২০সালে এনজিও ঋণ নিয়ে শুরু করেন মোয়া ব্যবসা। এরপর দিন যতই যাচ্ছে তার মোয়ার পরিচিত ততই বাড়ছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে মেকানিক ছিলাম। কোমড়ের ব্যথার অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন বসে ছিলাম। পরে চিকিৎসার জন্য সেই কাজ বাদ দিয়ে বেকার হয়ে পড়ি। প্রায় চার বছর আগে ২০২০ সালে নিজেই মোয়া তৈরি করে বাজারজাত করি। এভাবে শুরু আমার এই ব্যবসা। মূলধন না থাকায় এনজিও ঋণের উপর নির্ভরশীল হই। চলতি বছর দুটো এনজিও থেকে দুলাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। আমার এখানে বর্তমানে মোয়া তৈরিতে বিভিন্ন বয়সী ২৮-৩০জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
‘শ্রমিকরা নিজেদের সংসারের কাজ করে এসে দিন দুই শত টাকা মজুরিতে এখানে কাজ করছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ মণ মুড়ি দিয়ে মোয়া তৈরি হয় ১০ হতে ১২ হাজার পিছ। স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভেজালমুক্ত এসব মোয়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। আমার এই মোয়া উলিপুর, চিলমারী এবং রাজারহাট উপজেলার হাট বাজারে যায়।’
শাপলা বেগম বলেন, ‘আগে বেশ অভাবে দিন কেটেছে। এখন মোয়ার ব্যবসা ভালো হওয়ায় কিছুটা স্বচ্ছতা আসছে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া খরচও যোগান দিতে সমস্যা হয় না।’
নারী শ্রমিক বুলবুলি আকতার বলেন, ‘সাইফুল ভাইয়ের এখানে আমরা প্রতিদিন ২৫ জন কাজ করি দুই শত টাকা মজুরিতে। বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে মোয়া তৈরি করি। এতে করে সংসারে বাড়তি আয় হওয়ায় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। সন্তানের চাওয়া পূরণ করতে সমস্যা হয়না।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম বিসিক শিল্প নগরির উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, ‘আবেদন করলে সাইফুলকে ঋণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’