আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি-জিএফআইয়ের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রধান মাধ্যম আমদানি-রপ্তানি। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও উঠে এলো সেই বাস্তবতা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ৩ কোটি ডলার কম এসেছে। যদিও রপ্তানির হিসাব বলছে ভিন্ন কথা। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে গত অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪৮ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু পণ্য রপ্তানির ১ হাজার ১৯৯ কোটি বা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে আসেনি। ডলারের বর্তমান দাম অনুযায়ী যা প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সেবা রপ্তানির ৯ কোটি ডলার বা ৯৯২ কোটি টাকাও দেশে ফেরত আসেনি।
ইপিবির হিসাবে গত অর্থবছরে দেশ থেকে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। যার মধ্যে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হিসেবে দেশে এসেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মানে গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ১ হাজার ১৯৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি।
দেশের রপ্তানি আগের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ইপিবির হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে দেশ থেকে মোট পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি বা ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, পোশাক রপ্তানির ৩ হাজার ৬৯৫ কোটি ডলার দেশে এসেছে। অর্থাৎ শুধু পোশাক রপ্তানিতেই কম এসেছে ১ হাজার ৪ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, হিসাবে এতটা পার্থক্য হওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। তিনি বলেন, ‘রপ্তানির আড়ালে যদি সত্যি কেউ অর্থ পাচার করে থাকেন তাকে ধরতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য পুরো তৈরি পোশাক খাতের ওপর অভিযোগ আসুক তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সত্যিই হিসাবের গরমিল কেন তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’
ইপিবির হিসাব আরও বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯১ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হলেও দেশে এসেছে ৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ১২২ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে দেশে এসেছে ১৩১ কোটি ডলার। তবে ১১০ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হলেও দেশে এসেছে ৭৩ কোটি ডলার।
শুধু পণ্য রপ্তানিতেই নয়, সেবা রপ্তানিতেও গরমিল রয়েছে। ৭৪৯ কোটি ডলারের সেবা রপ্তানির বিপরীতে দেশে এসেছে ৭৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ সেবা খাতের ৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাব করে শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে যেসব অর্থ আসে সেগুলো ধরে। অন্যদিকে ইপিজেড, শর্ট শিপমেন্ট, ডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব যুক্ত করে পরিসংখ্যান দেয় ইপিবি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির হিসাবের মধ্যে নানা কারণে পার্থক্য রয়েছে।’
তবে তিনি জানান, দুই সংস্থার মধ্যে হিসাবে পার্থক্যের মূল কারণ বের করতে ত্রিপক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে বলেও জানান তিনি।