বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের দেয়া চাহিদার পণ্য নেবে না। এমনকি যদি পণ্য চালানের পর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়, তবে তারা ওই পণ্যের জন্য পেমেন্ট করতে সক্ষম হবে না।
একজন বায়ার (ক্রেতা) ইতোমধ্যে তাদের নতুন এলসিতে এমন একটি ধারা যুক্ত করেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের বৈশ্বিক ক্রেতারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ক্রয় আদেশে নতুন শর্ত যুক্ত করেছেন।
শিল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শর্তে তারা বলেছেন, এ ধরনের সম্ভাব্য কোনো নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে তারা পণ্য বা অর্থপ্রদানের দায়ভার গ্রহণ করবেন না।
শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর দুশ্চিন্তায় পড়েন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। এবার সেই দুশ্চিন্তা আরও কিছুটা বাড়ল।
ক্রেতাদের এই শর্ত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি নেতিবাচক ধাক্কা; যা স্থানীয় রপ্তানিকারকদের অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘একজন বায়ার (ক্রেতা) ইতোমধ্যে তাদের নতুন এলসিতে এমন একটি ধারা যুক্ত করেছে যে, বাংলাদেশ যদি কোনো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা পণ্য নেবে না। বা যদি পণ্য চালানের পর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়, তবে তারা ওই পণ্যের জন্য পেমেন্ট করতে সক্ষম হবে না।’
চট্টগ্রামে বিজিএমইএ কার্যালয়ে মঙ্গলবার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে পোশাক উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ক্রেতাদের থেকে উদ্ভূত সবশেষ এই শর্ত তাদেরকে আরও শঙ্কিত করে তুলেছে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এ মান্নান কচি ও প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
বিজিএমইএ সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পোশাক ব্যবসা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে ঠিক তখনই এ সমস্যা হাজির হয়েছে। এটি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এখন ব্যাংকগুলো এ ধরনের মাস্টার এলসি বা রপ্তানি আদেশের বিরুদ্ধে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে।’
ফারুক আরও বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিকারকরা আগামী ছয় মাস টিকে থাকতে পারলে সামনের দিনে তারা আরও শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’
বাংলাদেশ সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজিএমইএ।
বন্দর পরিষেবার গুণমান উন্নয়ন নিয়ে ডাকা বৈঠকটিতে সম্ভাব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি।
বাজার পুনরুদ্ধারের এই সময়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।