নানামুখী পদক্ষেপের পরও ডলারের বাজারের অস্থিরতায় লাগাম টানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু ব্যাংক নয়, খোলাবাজারের জন্যও ডলারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। তবে সেই দর শুধু রয়ে গেছে কাগজে-কলমেই, বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিকোচ্ছে ডলার।
এদিকে সঙ্কট থাকলেও বাড়তি দাম দিলেই খোলাবাজারে পাওয়া যায় ডলার- এমন তথ্য শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার এক বিশেষ বৈঠকে খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনে ১১৭ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। এর বেশি দামে ডলার লেনদেন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে অ্যাসোসিয়েশন। পাশাপাশি প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও।
এ বিষয়ে মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব মো. হেলাল উদ্দিন সিকদার সাংবাদিকদের জানান, ডলার-সংক্রান্ত নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানায় বাফেদা ও এবিবি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বৈঠক হয়।
তার মতে, যারা মানি চেঞ্জার কোম্পানিগুলোর বাইরে ডলার ব্যবসা করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে বৈধ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। আর এর সুবিধা পাবেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে ডলার মার্কেটও স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে এবিবি চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। তারপরও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব।’
আমদানিকারকেরা নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছেন কি না- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো আমদানিকারকের এ রকম অভিযোগ থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে।’
তাছাড়া সকল বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেয়া যায় না বলেও মনে করেন তিনি।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। সোমবারও ১২৪ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনেছে কিছু বেসরকারি ব্যাংক। খোলাবাজারের ডলার ১২৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড।
ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে রয়েছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। পাশাপাশি কোনো কোনো ব্যাংক আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে ডলারের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ১১৬ টাকা।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসী আয় কিনছে। আবার বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক এই প্রণোদনার পাশাপাশি আরও বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে।